শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৪

উম্মুহাতুল মু’মিনীন জীবনী

উম্মুল মু‘মিনীন অর্থ হচ্ছে মু‘মিনদের মাতা, আর উম্মুহাতুল মু’মিনী অর্থ হচ্ছে মু’মিনদের মাতাগণ। হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই জান্নাত হচ্ছে তোমাদের মায়ের ক্বদমের নীচে’
এই হাদীছ শরীফ থেকেই বুঝা যায় মাতার সম্মান কিরূপ। মু’মিনদের মাতা বলতে আজওয়াজে মুত্বাহহারাত অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পবিত্র আহলিয়াগণ উনাদেরকে বুঝায়। উম্মুহাতুল মু’মিনীনগণ উনারা সংখ্যায় ১৩ জন ছিলেন।

তম্মধ্যে ৮ জন ছিলেন কুরাইশ গোত্রের:
(১) হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম
(২) হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম
(৩) হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম
(৪) হযরত হাফছা আলাইহাস সালাম
(৫) হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম
(৬) হযরত উম্মে হাবিবাহ আলাইহাস সালাম
(৭) হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম
(৮) হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম

দুই জন ছিলেন অন্যান্য আরব গোত্রের:
(৯) হযরত যয়নব বিনতে খুযায়মা আলাইহাস সালাম, বনু হিলাল গোত্রের
(১০) হযরত জুওয়ায়রিয়া আলাইহাস সালাম, বনু মুছতালিক গোত্রের।

দুইজন ছিলেন ইয়াহুদী সম্প্রদায় থেকে (ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে):
(১১) হযরত ছাফিয়া আলাইহাস সালাম
(১২) হযরত রায়হানা আলাইহাস সালাম।

আর একজন ছিলেন ঈসায়ী সম্প্রদায় থেকে (ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে):
(১৩)  হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট কোন বিষয়কেই আমাদের সাধারণ মানবীয় ধ্যান ধারণা অনুযায়ী বিবেচনা করা যাবেনা। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বেমেছাল, আল্লাহ পাক উনার পরেই উনার শান। সাধারণ উম্মতের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দ্ধারণ করে দিয়েছেন শর্ত ও ক্ষমতা অনুসারে উর্দ্ধে ৪ জন আহলিয়া রাখা যাবে। খালিক্ব, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব-উনাকে তিনি এই নির্দ্ধারিত সীমার উর্দ্ধে আহলিয়া গ্রহণ করার ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, যা কালাম পাকে উল্লেখ রয়েছে। সাধারণ অন্যান্য নবী-রসুলদেরও অনেক খাছ বৈশিষ্ঠ্য রয়েছে যা সাধারণ মানুষ থেকে ভিন্ন। যেমন পূর্ববর্তি নবীদের মধ্যে দেখা যায় হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার ১০০ জন আহলিয়া ছিলেন। হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম উনার ৭০০ আহলিয়া এবং ৩০০ বাঁদী ছিলেন এবং উনার সর্বশেষ আহলিয়া ছিলেন হযরত বিলকিস আলাইহাস সালাম। এই সংখ্যাধিক্যতা নবীদের মু’জিযার অন্তর্ভূক্ত। খালিক্ব, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের এত অধিক সংখ্যক আহলিয়া রাখার জন্য ইখতিয়ার দিয়েছিলেন এবং এর শক্তি-সামর্থও দিয়েছিলেন। সকল নবীগণই মা’ছুম, উনারা সর্বাবস্থায় নফসানী খাহেশাতের উর্দ্ধে। উনারা ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও মর্জির খেলাফ কোন কাজ করেন না। হযরত শাহ আবদুল হক্ব মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত মাদারিজুন নবুওওত কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জান্নাতী ৪০ জন পুরুষের শক্তি দেয়া হয়েছিল। এক বর্ণনায় এসেছে, জান্নাতী একজন পুরুষ দুনিয়ার একশত পুরুষের সমান শক্তির অধিকারী হবে। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন, একবার হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম খাবার ভর্তি একটি ডেগ আমার নিকট নিয়ে আসলেন। আমি তা থেকে কিছু খাবার গ্রহণ করলাম । তাতে আমার ভিতরে ৪০জন পুরুষের সমান পুরুষত্বশক্তি এসে গেল (মাদারিজুন নবুওওয়াত)।
এখন উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই, সাধারণ মানুষ যুবক বয়সে একজন যুবতী স্ত্রী পছন্দ করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তদ্রুপ করেননি। উনার যখন প্রথম নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয় তখন উনার বয়স মুবারক ছিল ২৫ বছর, আর উনার প্রথমা আহলিয়া উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিল ৪০ বছরের উর্দ্ধে। উনার দুনিয়াবী হায়াতে তিনি অন্য কোন আহলিয়া গ্রহণ করেননি। উনার বিছাল শরীফের পরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বয়স মুবারক যখন ৫০ বছরের উর্দ্ধে তখন ৫২ বছর বয়স্কা উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছাওদা আলাইহাস সালাম উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম-উনার সঙ্গেও খালিক্ব, মালিক, মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশক্রমে উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্দেশ সম্পর্কে উনার সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক আলোচনায় আমরা পরে আলোচনা করব। সে সময় উনার বয়স মুবারক ছিল মাত্র ৬ বছর। মক্কা শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ২৮ বছর বৈবাহিক হায়াত মুবারকের মধ্যে যদিও এই তিনটি নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়, এ সময় শুধু একজন আহলিয়া উনার সঙ্গে ছিলেন অর্থাৎ হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার বিছাল শরীফের পরে হযরত সাওদা আলাইহাস সালাম। হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম অল্প বয়স্ক হওয়ার কারণে আরো ৩ বছর পর মদীনা শরীফে উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে আজওয়াজে  মুত্বাহহারাত উনাদের অন্তর্ভূক্ত হন।


সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা শরীফে উনার ১০ বছর হায়াত মুবারকের শেষের দিকে, উনার বয়স মুবারক যখন ৫৮ থেকে ৬০ বছর, তখন বাকী দশটি নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। এই দশ জন উম্মুহাতুল মু’মিনীন উনাদের মধ্যে একমাত্র হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম ব্যতীত সকলই ছিলেন বিধবা। হযরত মারিয়া কিবতিয়া আলাইহাস সালাম, যিনি পূর্বে ছিলেন ঈসায়ী সম্প্রদায়ের, উনাকে মিসরের শাসনকর্তা মুকাওকিস হাদিয়া হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। এই নিকাহ মুবারক সমূহ করা হয়েছিল বিশেষ বিশেষ কারণ ও উদ্দেশ্যে এবং খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে, এতে দুনিয়াবী কোন লোভ লালসা ছিল না। 


নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াত মুবারকের শেষ সময়টি ছিল সামাজিকভাবে অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ, ঘন ঘন সারিয়া জিহাদের কারণে অনেক মুসলমান রমণী স্বামী হারা, পিতৃ হারা ইয়াতীম হয়ে পড়েন। পক্ষান্তরে বিজয় অভিযানের কারণে বহু বিধর্মী মহিলা বন্দীনী গণীমত হিসাবে মুসলমানদের হস্তগত হয় । তৎকালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় আরবে বহু-বিবাহের প্রচলন ছিল। ইসলামের প্রারম্ভে অনেকের ৮/১০ জন স্ত্রী ছিল । তম্মধ্যে ইসলামী আইন অনুযায়ী ৪ জন রেখে বাকী স্ত্রীদের তালাক দিতে হয়েছে। সাধারণত: বিধবা বিবাহ করা একটা বিরাট ঝামেলার ব্যাপার, উনারা বয়স্কা হয়ে থাকেন এবং উনাদের সন্তান সন্ততি থেকে থাকেন, উনাদের ভরণ পোষণের ব্যাপার রয়েছে। এমতাবস্থায় সর্ব-প্রথম আল্লাহ পাক উনার হাবীব বিধবাদের আশ্রয় দিয়ে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে বিধবা বিবাহের প্রতি উৎসাহ দেখিয়েছেন, নতুবা তখনকার পরিস্থিতিতে এক বিরাট সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিত। কুরআন শরীফে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক একাধিক বিবাহ সংক্রান্ত যে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন, তাতে বুঝা যায় সাধারণত: এক বিবাহ হচ্ছে আদর্শ, আর একাধিক বিবাহ হচ্ছে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এবং শর্ত সাপেক্ষে। হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন মানব জাতির সর্ব বিষয়ে আদর্শ। মক্কা শরীফে উনার ৫৩ বছর হায়াত মুবারকে ২৮ বছর বৈবাহিক হায়াত মুবারক ছিল এক বিবাহের আদর্শ এবং মদীনা শরীফে উনার হায়াত মুবারকের শেষ ১০ বছর ছিল বহু বিবাহের আদর্শ। কারণ একাধিক আহলিয়ার সঙ্গে কি ভাবে জীবন যাপন করতে হয়, তারও আদর্শ তিনি রেখেছেন। এ ছাড়াও এর মধ্যে আমাদের ধারণার উর্দ্ধে আরো অনেক হিকমত রয়েছে, যা খালিক্ব, মালিক, রব্ব মহান আল্লাহ পাক তিনি ভাল জানেন।


ফাযায়েল-ফযীলত:

কুরআন শরীফের কয়েকটি আয়াত শরীফ থেকে সমস্ত উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম-উনাদের অতুলনীয় ফাযায়েল ফযীলত:
সুরা আহযাবের ৬ নং আয়াত শরীফে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদেরকে উম্মুহাতুল মু’মিনীন বলে উল্লেখ করেছেন, 
 ألنَّبِيُّ أوْلَى  بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أنْفُسِهِمْ وَ أزْوَاجُهُ أمُّهَاتُهُمْ
অর্থ্যাৎ “নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈমানদারগণের নিকট উনাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। আর উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনগণের মাতা”
এই আয়াত শরীফের প্রেক্ষিতে উনাদের একটি লক্বব মুবারক أمهات المؤمنين (মু’মিনগণের মাতা) এই হিসাবে হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন লোক ছিলেন, এখন আছেন এবং ভবিষ্যতে থাকবেন উনাদের সকলেরই মাতা হচ্ছেন হযরত উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম।
মনে হয়, এই একটি মাত্র লক্বব মুবারকই উনাদের ফাযায়েল ফযীলত প্রকাশের জন্য যথেষ্ঠ। সুবহানাল্লাহ! 

খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বেমেছাল পুত:পবিত্রা ও সুমহান চরিত্র মুবারকের অধিকারিণী করে সৃষ্টি করেছেন সেজন্য উনাদের আরেকটি  লক্বব মুবারক হচ্ছে أزواج مطهرات (আজওয়াজে মুত্বাহহারাত অর্থাৎ পুত:পবিত্রা আহলিয়াগণ) অর্থাৎ উনাদের চরিত্র সকল প্রকার কলুষ-মুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

আবার আজওয়াজে মুত্বাহহারাত সকলই আহলে বায়ত শরীফ উনাদের অন্তর্ভূক্ত। খালিক্ব, মালিক, রব্ব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 إنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا -
অর্থ্যাৎ “হে আহলে বায়ত অর্থাৎ নবী পরিবার! আল্লাহ পাক অবশ্যই চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে অর্থাৎ আপনাদেরকে পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন” এই আয়াত শরীফ নবী পরিবার উনাদের সকলেরই বিশেষ মর্যাদা, পবিত্রতা ও বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে। (সুরা আহযাব/৩৩)

সুরা আহযাবের ৫৩ নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,

وَلَا أنْ تَنْكِحُوْا أزْوَاجَهُ مِنْ بَعْدِهِ أبَدًا
অর্থ্যাৎ “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বিছাল শরীফের পর উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তোমরা বিবাহ করতে পারবে ন “ এই একই সুরার ৩২ নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ
অর্থ্যাৎ “হে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার আহলিয়াগণ অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীনগণ! আপনারা  অন্যান্য নারীদের মত নন।” আল্লাহ পাক উনার হাবীব  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন অন্য কোন পুরুষ বা সাধারণ মানুষের মত নন, উনারাও অন্য কোন সাধারণ নারীর মত নন। এই সব আয়াত শরীফ থেকে বুঝা যায়, খালিক্ব, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের মর্যাদাকে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল স্ত্রী জাতীর উপরে স্থান দিয়ে উনাদেরকে পৃথক করে সম্মান দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

খালিক্ব, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনেকগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেছিলেন। তিনি ছিলেন নূরে  মুজাসসাম অর্থাৎ উনার জিসিম বা শরীর মুবারক নূরের তৈরী, সেজন্যই উনার ছায়া ছিল না, সূর্য ও চন্দ্রের আলোকে উনার কোন ছায়া পড়ত না। সেজন্যই উনার ঘাম মুবারক আতর গোলাপ থেকেও অধিক সুগন্ধময় ছিল, উনার জিসিম মুবারকে মশা-মাছি বসত না, রক্ত-গোশতের শরীর হলে অবশ্যই মশা-মাছি বসত, উনার ছোট ইস্তেঞ্জা ও বড় ইস্তেঞ্জা মুবারকও পাক ছিল এবং সুগন্ধময় ছিল, যা মাটিতে পড়ার সাথে সাথে মাটি চুষে নিত। উনার বড় ইস্তেঞ্জা মুবারক ও ছোট ইস্তেঞ্জা মুবারক কেউ কখনও দেখেনি। হযরত শাহ আবদুল হ্ক্ব মুহাদ্দিছে দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি (যাঁর সঙ্গে প্রতিদিন স্বপ্নে অথবা জাগ্রত অবস্থায় হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র যিয়ারত হাসিল হতো) উনার লিখিত মাদারিজুন নবুওয়ত কিতাবে এ বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন। এইজন্যই আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যাঁরা ঈমানের সাথে একবার মাত্র দর্শন  করেছেন উনারাই ছাহাবী হয়ে গেছেন। আমরা জানি যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মর্যাদা নবীদের পরে অন্যান্য সকল উম্মত অপেক্ষা অধিক। আর উনার সর্বাপেক্ষা অধিকতর সান্নিধ্যে অবস্থান করেছিলেন উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ। উম্মুহাতুল মু’মিনীনগণ উনারা এক দিক দিয়ে মহিলা ছাহাবিয়া, অন্যদিকে উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পবিত্র আহলিয়া, আবার উনারা আহলে বায়ত শরীফের অন্তর্ভূক্তও বটে। উনাদের অপর একটি খাছ বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে উনারা সকলেই জান্নাতে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সাথে বসবাস করবেন সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফে আয়াত শরীফ নাযিল করে অন্য কারো সাথে উনাদের  বিবাহ নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!

(১) উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম


পরিচিতি: উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি মক্কা শরীফের অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও ঐশ্বর্যশালী মহিলা, জাহিলী যুগে  উনার লক্বব মুবারক ছিল ‘ত্বাহিরা’ (পবিত্রা), কুবরাও উনার অপর একটি লক্বব মুবারক এবং এই মুবারক লক্ববেই   তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি ছিলেন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার প্রথমা আহলিয়া। তিনি কুরাঈশ গোত্রের সন্মানিত শাখা-গোত্র বনু আছাদে বিলাদত শরীফ লাভ করেন।

বিলাদত শরীফ: হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি আমুল ফীল (আবরাহার হস্তী বাহিণীর বছর)-এর ১৫ বছর পূর্বে বিলাদত শরীফ লাভ করেন।

প্রাথমিক জীবন প্রথম জীবনে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার পর পর দু’টি নিকাহ মুবারক হয়েছিল। প্রথম স্বামীর নাম ছিল আবু হালা। তিনি জাহেলী যুগেই মারা যান। এই সংসারে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার দু’টি পুত্র সন্তান ছিলেন – হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত হালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উভয়ই ছিলেন বিশিষ্ট ছাহাবী। হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুয়ূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুলিয়া মুবারক (দৈহিক অবয়ব মুবারক) উনার অতি সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন, যা ইতিহাস ও সীরত গ্রন্থ সমূহে অত্যন্ত মসহুর। হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার দ্বিতীয় স্বামীর নাম ছিল আত্বীক বিন ‘আবিদ। আবু হালার ইনতিকালের পর উনার সাথে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সংসারে হযরত হিন্দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নামে উনার এক কন্যা সন্তান ছিলেন। ব্যবসা-বানিজ্য কুরাঈশদের মত হযরত  কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার আয়ের উৎস ছিল ব্যবসা বানিজ্য। উনার ব্যবসার মালের চালান সিরিয়ায় যেত এবং উনার একার জিনিষপত্র সমগ্র কুরাঈশদের  জিনিষপত্রের সমান হতো। উল্লেখযোগ্য যে মক্কা শরীফে চাষোপযোগী কৃষি জমি নেই, এজন্য এখানকার অধিবাসীগণ বিশেষ করে কুরাইশগণ ব্যবসা করেই জীবন ধারণ করতেন। যেহেতু সমস্ত কুরাইশ গোত্রের সকলের ব্যবসার সমান ছিল উনার ব্যবসার পুঁজি ও মালামাল, উনার ব্যবসায়ের এ বিশালতা থেকে উনার সম্পদের প্রাচূর্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়।

নিকাহ মুবারক: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে যখন বিবাহ মুবারক হয় তখন উনার বয়স মুবারক ৪০ বছরের উর্দ্ধে। আর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার বয়স মুবারক ছিল ২৫ বছর। সুবহানাল্লাহ ! 

ইসলাম গ্রহণ সকল মুসলমান এ ব্যাপারে একমত যে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি সর্বপ্রথম রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার উপর ঈমান আনয়ন করেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
ইসলামের জন্য সমুদয় ধন-সম্পপদ ওয়াক্ফ ইসলাম গ্রহণের পর উম্মুল মু’মিনী হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সমুদয় ধন-সম্পদ ইসলাম প্রচার ও প্রসারের
জন্য ওয়াক্ফ করে দেন সুবহানাল্লাহ! নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যবসা বানিজ্য ছেড়ে আল্লাহ পাক-উনার ইবাদতে ও ইসলাম প্রচারে নিমগ্ন হলেন। এতে আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সঞ্চিত অর্থ দ্বারাই জীবন যাপন করতেন। উনার রেহেম শরীফে রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তান সন্ততি মশহুর মত অনুযায়ী উনার রেহেম শরীফে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার তিন জন পুত্র
সন্তান ও চার জন কন্যা সন্তান বিলাদত শরীফ লাভ করেন। 

তিন জন পুত্র সন্তান হচ্ছেন:
(১) হযরত কাসিম আলাইহিস  সালাম
(২) হযরত ত্বইয়্যিব আলাইহিস সালাম এবং
(৩) হযরত ত্বাহির আলাইহিস সালাম।

আর চার জন কন্যা সন্তান হচ্ছেন:
(১) হযরত  যায়নব  আলাইহাস সালাম
(২) হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম
(৩) হযরত উম্মে কুলছুম আলাইহাস সালাম এবং
(৪) সাইয়্যিদাতু নিসাঈ আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম।

পুত্র সন্তানগণ-উনারা সকলই অপ্রাপ্ত বয়সে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন। কন্যা সন্তানগণ-উনাদের মধ্যে হযরত যয়নব আলাইহাস সালাম-উনার বিবাহ মুবারক হয়েছিল হযরত আবুল ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার সাথে। হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম ও হযরত উম্মেম কুলছুম আলাইহাস সালাম-উনাদের নিকাহ মুবারক হয়েছিল হযরত উছমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম -উনার সাথে, একজনের বিছাল শরীফের পর অন্যজনের। আর সাইয়্যিদাতুন নিসাই আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম-উনার বিবাহ মুবারক হয়েছিল হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ওয়া আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে। কাফিরদের দ্বারা নির্যাতন-ভোগ মক্কা শরীফের সর্বাপেক্ষা ঐশ্বর্যশালীনী, অগাধ ধন-সম্পদের অধিকারিনী, পুত:পবিত্র চরিত্রের অধিকারিনী ত্বাহিরা, হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ৬৫ বছর হায়াত মুবারকের মধ্যে নবুয়ত প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৫৫ বছর দুনিয়াবী সুখ শান্তিতে স্বাভাবিকভাবেই জীবন যাপন করছিলেন। অত:পর উনার শেষ জীবনে নবুয়ত প্রকাশের পর থেকে কাফিরদের বিরোধিতা শুরু হলো এবং ক্রমেই তা বৃদ্ধি পেতে লাগল। তিনি ধৈর্য সহকারে সমস্ত পরিস্থিতির মুকাবিলা করেন। কাফিরদের বিরোধিতা ও নির্যাতনের জন্য রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মনে যে আঘাত পেতেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত  কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার সান্তনা বাক্য দ্বারা তা দূরীভূত হতো। সুবহানাল্লাহ!
শি‘য়াবে আবু তালিবে অবরূদ্ধ জীবন নির্যাতনের সবচেয়ে কঠিনতম দিনগুলি ছিল শিয়াবে আবু তালিবের তিন বছরের অবরুদ্ধ জীবন। নবুয়ত প্রকাশের ৭ম বছর মুহররম মাসে কুরাঈশগণ এইরূপ একটি অঙ্গীকার নামা তৈরী যে, বনু হাশিম যতক্ষণ পর্যন্ত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাকে হত্যার জন্য তাদের নিকট সোপর্দ্দ না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে কেউ আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করবে না, ক্রয় বিক্রয় করবে না, তাদের সাথে মেলামেশা ও কথাবার্তা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখবে এবং তাদের নিকট কোন খাদ্য সামগ্রী পৌঁছতে দিবে না। উপায়ান্তর না দেখে বনু হাশিম আবু কুবায়েশ পর্বতের “শি‘য়াবে আবী তালিব” নামক গিরিপথে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। ইহা ছিল হাশিম গোত্রের মিরাছী সুত্রে প্রাপ্ত গিরিপথ। আবু তালিব এবং উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে ছিলেন। দীর্ঘ তিন বছর পর্যন্ত উনারা এই গিরিপথে অবস্থান করেন। এখানে এত কষ্টে উনাদের জীবন যাপন করতে হয়েছে যে, খাদ্যের অভাবে গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে হয়েছে। পঞ্চাশের অধিক বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি অতি দু:খ কষ্টের মধ্য দিয়ে সেই পার্বত্য গিরিপথে জীবন যাপন করতে থাকেন। অবশেষে দুশমনের মধ্যেই দয়ার সঞ্চার হলো। তাদের পক্ষ হতেই লিখিত অঙ্গীকার ভঙ্গ করার  উদ্যোগ গ্রহণ করা হলো। নবুয়ত প্রকাশের ১০ম বছরে  তারা উনাদেরকে বের করে নিয়ে আসলেন। সুবহানাল্লাহ!

বিছাল শরীফ: আবু তালিব গিরিপথ (শি‘য়াবে আবু তালিব) থেকে বের হওয়ার পরপরই আবু তালিব ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম-উনাদের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে গেল। অবশেষে একই বছরে উভয়ই বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন। সুবহানাল্লাহ!

শি‘য়াবে আবু তালিব থেকে বের হওয়ার পরে নামায ফরয হওয়ার পূর্বে (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার স্ব-শরীরে মিরাজ শরীফ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে) নবুয়ত প্রকাশের ১০ম বছরে ১৭ই মাহে রমাদ্বান শরীফে ৬৫ বছর বয়স মুবারকে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বিছাল শরীফ প্রাপ্ত হন। মক্কা শরীফের জান্নাতুল মা’লা নামক কবরস্তানে উনার দাফন মুবারক সম্পন্ন হয়। জান্নাতুল মা‘লায় উনার মাযার শরীফ-এর স্থান এখনও চিহ্ণিত রয়েছে (উসুদুল গাবা, ইছাবা)। হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার বিছাল শরীফের পর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন: এইদিন উ¤মতের উপর এমন দু’টি মুছিবত আপতিত হয় যে, আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে, আমি কোন্টির উপর বেশী দু:খ করব। এ দু’টি মুছিবত হচ্ছে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম ও আবু তালিব-উনাদের ওফাত শরীফ। এই দু:খ ও চিন্তার কারণেই উক্ত বছরের নাম রাখা হয় عامالحزن (‘আমুল হুযন অর্থাৎ দু:খের বছর)।  সুবহানাল্লাহ! 

ফযীলত ও মর্যাদা: উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন সেই পবিত্রা নারী যিনি নবুয়ত প্রকাশের পূর্বেও মূর্তিপূজা করতেন না।
উনার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য-সমূহের মধ্যে একটি এই ছিল যে, তিনি প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার পবিত্র ছোহবত মুবারকে কাটান এবং একমাত্র হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সকল সন্তান উনারই রেহেম শরীফে বিলাদত শরীফ লাভ করেন (ইবনে সা’দ). এতদ্ব্যতীত এই সৌভাগ্যও তিনি লাভ করেন যে, তিনি জীবিত থাকতে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আর দ্বিতীয় আহলিয়া গ্রহণ করেন নি। সুবহানাল্লাহ !
উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম-উনার আভিজাত্য, সম্মান ও মর্যাদা সর্বজন স্বীকৃত। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম তিনি আল্লাহ পাক-উনার পক্ষ হতে উনার জন্য সালাম নিয়ে আসতেন। এক হাদীছ শরীফের বর্ণনায় জানা যায়, একবার নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম-উনাকে বললেন: হে হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম! স্বয়ং আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম-উনার মাধ্যমে  আপনাকে সালাম দিয়েছেন।  উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি উক্ত সালামের জওয়াব দিলেন এভাবে:

و السلام عليك، و على جبرائيل عليه السلام، وإن الله هو السلام
(অর্থ : ইয়া রসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি এবং হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম-উনার প্রতিও আমার সালাম। আর আল্লাহ পাক তিনি তো নিজেই সালাম (শান্তি দাতা) অর্থাৎ  তিনি অন্য কোন সালামের মুখাপেক্ষী নন। সুবহানাল্লাহ ! এই জওয়াব থেকে উনার তীক্ষ্ন বুদ্ধিমত্তা ও  গভীর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় । নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সারা জীবন উনার কথা স্মরণ করতেন। সুবহানাল্লাহ!
[সূত্র-সমূহ : উসুদুল গাবা, ইছাবা,  তাবাকাত, তফসীরে মাজহারী, অন্যান্য সীরত গ্রন্থাবলী] (চলবে)


Areefur Rahman



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন