শুক্রবার, ২০ জুন, ২০১৪

হিন্দুস্তানের চুড়ান্ত যুদ্ধের হাদীস সমূহ

হিন্দুস্তানের চুড়ান্ত যুদ্ধের হাদীস সমূহ

রাসুল (সা) একদিন পূর্ব দিকে তাকেয়ে বড় বড় করে নিশ্বাস নিচ্ছিলেন, এমন অবস্থায় এক সাহাবি জিজ্ঞাস করল, ইয়া রাসুল আল্লাহ্, আপনি এমন করছেন কেন ?

রাসুল (সাঃ) বললেন আমি পূর্ব দিক থেকে বিজয়ের গন্ধ পাচ্ছি।
সাহাবি (রাঃ) জিজ্ঞাস করলেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ্ কিসের বিজয়ের গন্ধ পাচ্ছেন?

রাসুল (সাঃ) বললেন পূর্ব দিকে মুসলিম ও মুস্রিক ( যারা মূর্তি পূজা করে ) তাদের মাঝে একটি যুদ্ধ হবে, যুদ্ধ টা হবে অসম , মুসলিম সেনাবাহিনী সংখ্যায় খুব কম থাকবে, এবং মুস্রিকরা থাকবে সংখ্যায় অধিক।
মুসলিম রা এত মারা যাবা যে রক্তে মুসলিমদের পায়েয় টাঁকুনি পর্যন্ত ডুবে যাবে।

মুসলিম রা তিন ভাগে বিভক্ত থাকবে, এক সারি এত বড় মুস্রিক সেনাবাহিনী দেখে ভয় পেয়ে পালাবে ।

রাসুল (সাঃ) বললেন তারাই হোল জাহান্নামি।

আর এক ভাগ এর সবাই শহীদ হবেন।

শেষ ভাগ এ যারা থাকবে, তারা আল্লাহ্ আর উপর ভরসা করে যুদ্ধ করে যেতে থাকবে , এবং শেষ পর্যন্ত জয় লাভ করবেন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন – এই যুদ্ধ, বদর এর যুদ্ধের সমতুল্ল। সুবাহানাল্লাহ।
উনি এর ও বলেছেন, মুসলিম রা যে জেখানেই থাকুক না কেন , সবাই যেন ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন আমার উম্মতের দুটি দলকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করে দিবেন। একদল হল, যারা হিন্দুস্থান তথা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আরেক দল হল, যারা শেষ জামানায় হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ম (আ) এর সঙ্গী হবে। (নাসায়ী শরীফ খন্ড-১,পৃষ্ঠা-১৫২ ও তাবরানী)

এই হাদীসটি অন্য বর্ণনায় এভাবে এসেছে, রাসুল (সা) বলেছেন, আমার উম্মতের দুটি দলকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুন থেকে হিফাজত করবেন। একদল হল, যারা হিন্দুস্থান তথা ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। আরেক দল হল, যারা শেষ জামানায় হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ম (আ) এর সঙ্গী হবে। (মুসনাদে আহমাদ হাদিস-২২২৯৫, খ-১৬ পৃষ্ঠা-২৯৫, বায়হাকী খ-৯,পৃষ্ঠা-১৭৬, নাসায়ী শরীফ জিহাদ অধ্যায়)

হযরত আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেন, এ উম্মতের মধ্যে একটি মিশন সিন্ধু ও হিন্দুস্থান তথা ভারতের দিকে পরিচালিত হবে। আমি যদি এ অভিযান পেয়ে যাই এবং জিহাদ করে শহীদ হতে পারি তাহলে এমনটিই করব। আর যদি জীবিত ফিরে আসি তাহলে আমি মুক্ত স্বাধীন আবু হুরায়রা হয়ে যাব। আল্রাহ আমাকে দোযখের আগুন থেকে মুক্ত করে দিবেন। (মাসনাদে আহমাদ,হাদিস-৮৮০৮, খ-৯ পৃষ্ঠা-১১)

হযরত আবু হুরায়রা আরও বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) আমাদেরকে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ওয়াদা নিয়েছিলেন।আমি যদি এ অভিযান পেয়ে যাই আহলে আমি যেন আমার জান-মাল এতে ব্যয় করি। আর যদি আমি এ যুদ্ধে নিহত হই তাহলে সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদরুপে পরিগনিত হব। আর যদি জীবিত ফিরে আসি তাহলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাব। (মাসনাদে আহমাদ,হাদিস-৭১২৮, খ-৬ পৃষ্ঠা-৫৩৩, সুনানে কুবরা, ইমাম নাসায়ী হাদিস ২/৪৩৮৩ খ-৩ পৃষ্ঠা-২৮)

আলোচ্য হাদিস সমূহে এন্টি ভারত মুসলিমের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ যে মুসলিম ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিহত হবে সে হবে শ্রেষ্ঠ শহীদ। আর যে মুসলিম লড়াই করে জীবিত ফিরে আসবে, সে হবে জাহান্নাম হতে মুক্ত স্বাধীন মুসলিম। এ থেকে আরও প্রতিয়মান হয় যে, যদি কোন মুসলিম ভারতপন্থিদের হাতে নিহত হয় সেও শ্রেষ্ঠ শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। আর যদি কোন মুসলিম কোন ভারতপন্থির হাতে নির্যাতিত হবে, জখমী হবে তাহলে সেও জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ করবে ইনশাআল্লাহ ।

উনি বলেছেন খোরাসান অঞ্ছল থেকে কলেমা সম্বলিত পতাকাবাহী এক দল এই যুদ্ধ শুরু করবে।

পূর্ব দিকে আমরাও ও পড়ি , একসময় খোরাসান আমাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল যা এখন নেই।

আল্লাহ্ আমাকে ও আমাদের যেন ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার তৌফিক দান করেন ।

আমীন।







শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০১৪

খলিফা আব্দুল মাজিদ ইস্তাম্বুলের মসনদে।

ওসমানীয় খেলাফত চলছে তখন, ১৮৪৫ সাল।
খলিফা আব্দুল মাজিদ ইস্তাম্বুলের মসনদে।
এসময়ে এসেও ইউরোপের অবস্থা খুব একটা সুবিধার
ছিলনা, বিভিন্ন আর্থিক-সামাজিক সমস্যা বিপর্যস্ত
ছিল অনেক ইউরোপীয় দেশ। আয়ারল্যান্ডে এসময়
দেখা দেয় এক ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ। মহামারী টাইপের
রোগও ছড়িয়ে পড়ে ইংল্যান্ডের
প্রতিবেশী রাজ্যে, মারা যেতে থাকে হাজার
হাজার আদম সন্তান। এই দূর্ভিক্ষে প্রায় ১০ লাখ লোক
মারা যায়। আয়ারল্যান্ডের এই
দূর্দশা দেখে এগিয়ে আসেন খলিফা আব্দুল মাজিদ।
তিনি জরুরীভাবে ১০ হাজার স্টারলিং (যার
বর্তমান মূল্য প্রায় ১৭ লাখ মার্কিন ডলার) সাহায্য
পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন আয়ারল্যান্ডবাসীর জন্য।
কিন্তু বাধ সাথে ইউরোপের মোড়ল ইংল্যান্ড।
গোটা দুনিয়ায় লুণ্ঠন করে বেড়ানো ইংল্যান্ড
নিজেদের অধিনস্ত রাজ্যকে এই দূর্যোগেও মাত্র
২০০০ স্টারলিং এর বেশী সাহায্য
দেয়নি সেখানে কেন মুসলিম খলিফা তার ৫ গুণ
টাকা দিবে ! এ তো ইংল্যান্ডের মান-ইজ্জতের
ব্যাপার । রানী ভিক্টোরিয়া ইস্তাম্বুলকে এই
বলে সাবধান করে দেন
যে ইংল্যান্ডকে ডিংগিয়ে আয়ারল্যান্ডকে সাহায্য
দিতে যাওয়াটা রাজনৈতিক
এবং কূটনৈতিকভাবে বিপদজনক হতে পারে।
বাধ্য হয়ে খলিফা সাহায্যের পরিমাণ ১ হাজার
স্টারলিং এ নামিয়ে আনেন। এর পরেও এই অর্থের মূল্য
ছিল বর্তমান বাজার দরে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার
মার্কিন ডলার।
খলিফা আব্দুল মজিদ এতে সন্তুষ্ট হতে পারলেননা,
বারবার মনে হচ্ছিল তার যে এ অর্থে মৃত্যুর
কূপে পড়ে যাওয়া মানুষগুলোর কিছুই হবেনা হয়ত।
তিনি গোপনে ৩ টি জাহাজ ভর্তি করে খাবার
এবং ত্রাণ পাঠালেন আয়ারল্যান্ডের দিকে।
গোপেন বহু মাধ্যমে পাঠালেন নগদ অর্থ। মুসলিম
ত্রানবহরকে বৃটিশ সৈন্যরা আটকে দিল ডাবলিন
এবং বেলফাস্টের ঢোকার পথে। ওসমানীয়
সৈন্যরা দমে না গিয়ে ফেরার পথে ডাবলিনের
উত্তরে গোপনে ড্রগেডা নামের এক ছোট্ট শহরের
পাশে নোংগর করে গোপেন ত্রান সামগ্রী সেই
শহরের মেয়রের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডবাসীর
কাছে পৌছে দেয়।
ইউরোপের বাঘা বাঘা লুটেরা দেশ থাকতে মুসলিম
এক শাসকের এই ভালবাসা আর সাহায্য অভিভূত
করে আয়ারল্যান্ডের মানুষকে।
১৯৯৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রগেডা শহরের মেয়র
গডফ্রে খলিফা আব্দুল মজিদের এই সাহায্য
এবং অকৃত্রিম বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করেন এবং তৎকালীন
মুসলিম খেলাফতের সম্মানে একটি স্মৃতিফলক উদ্ধোধন
করেন।
এখনো যদি সেই ড্রগেডা শহরে যান তো দেখবেন
সেখানকার বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব 'ড্রগেডা ফুটবল ক্লাব'
এর লোগোতে ওসমানীয় খেলাফতের প্রতি সম্মান
জানানোর নিদর্শন হিসেবে মুসলমানদের প্রতীক
অর্ধচন্দ্র বা হেলাল-সেতারা অংকিত আছে।
এছাড়া ড্রগেডা কোর্ট অফ আর্মসের লোগোতেও
অংকিত আছে মুসলিম খেলাফতের গৌরবান্বিত
ইতিহাস।
এই আয়ারল্যান্ডেও কতিপয় উগ্র খৃষ্টান মুসলমানদের
বিরুদ্ধে কূৎসা রটায়, মৌলবাদী-ধর্মান্ধ এসব
আখ্যা দিয়ে ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রিয়
নবীকে গালিগালাজ করে।
তারা গালি দেবার আগে যদি মৌলবাদীদের এসব
ইতিহাসগুলো পড়ে দেখত !
আফসোস ! আমরাই বা কতটুকু জানি নিজেদের
ইতিহাস !
















এরা আমার আপনার ফিলিস্তিনী ভাই
বোন! ভাবছেন এরা এভাবে কাঁদছে কেন!?
একটি বার এদের খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছেন আপনি?
আপনার কাছে তো এখন আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলে ছাড়া অন্য কোন কিছুরই খবর
নেই! আপনি তো এখন রাসুল সা.এর সেই হাদীস
ও ভুলে গিয়েছেন যে : মুসলমান মুসলমানের ভাই!
হ্যাঁ হ্যাঁ ....এরা আমার আপনার মুসলমান
ভাই-বোন! আমি আপনি যখন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বলে চিল্লাচ্ছি,
তখন এরা ইসরাইলী মানুষরুপী জানোয়ার মার্কা সেনাদের হাত থেকে প্রাণ রক্ষা করার জন্য
বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তনাদ করছে! আর অঝরে অশ্রু ঝরাচ্ছে! এমন অবস্থার পরও সেই কুফফারদের
সাথে গলায় গলা মিলিয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের নামে বিশ্ব উন্মাদনায় শরীক হয়ে বিশ্বের সকল নির্যাতিত
মুসলমান ভাইদের সাথে উপহাস করতে আপনার বুক কি একটুও কাঁপছে না?
বিশেষ দ্রঃ বিশ্ব উন্মাদনা বিরোধী পোষ্ট অনেকের কাছে অনেক খারাপ লাগছে!
লাগুক খারাপ! তবুও আমি গাফলতির ঘুমে ডুবে থাকা মুসলামানদের
কে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েই যাবো ইনশাআল্লাহ!







শুক্রবার, ৬ জুন, ২০১৪

মদ নিষিদ্ধ করে আইন পাস usa

১৯৩০ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্টে, কনগ্রেস মদ নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস করল। সুবহানাল্লাহ, মুসলিম-অমুসলিম সকলেই বুঝতে পারে মদ খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে আমেরিকার সরকার এই আইনটি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিল। এই ঘটনার পর প্রায় ৫ লক্ষ লোক জেলে গেল, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় হল এই আইন বাস্তবায়নে,খুন হল হাজার হাজার লোক।

মজার ব্যাপার হল, মদ খাওয়ার পরিমাণে কম বেশ হলই না, উপরন্তু লোকজন নিজের ঘরে মদের তৈরি করতে শুরু করল। মদ উৎপাদনের প্রক্রিয়া বেশ অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ল। চার বছরের দুর্বিষহ সময়ের পর আমেরিকার সরকার এই আইন বাতি করল। তথাকথিত পরাক্রমশালী আমেরিকা এই আইন প্রয়োগ করতে পারল না,বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতি মদ নিষিদ্ধ করতে ব্যর্থ হল।

এবার আসুন আমরা ১৪০০ বছর আগে ফিরে যাই। জিবরীল (আঃ) রাসূল (সাঃ) এর কাছে আয়াত নিয়ে হাজির হলেন,

হে মুমিনগণ,এই যে মদ,জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। অতএব,এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।[সূরা মায়িদাঃ৯০]

মদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এই আয়াতটি আল্লাহর পক্ষে থেকে রাসূল (সাঃ) এর কাছে নাযিল হল। রাসূল (সাঃ) কোন পুলিশবাহিনী, সেনাবাহনী কিংবা ন্যাশনাল গার্ডের সাহায্য ছাড়া সাহাবাদের কাছে এই আয়াতটি পড়ে শুনালেন। সাহাবারা এটা শোনামাত্র রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে ঘোষণা করলেন, মদ খাওয়ার আর কোন বৈধতা ইসলামে নেই।

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, “আমি কয়জন সাহাবাকে মদ পরিবেশন করছিলাম এবং আমরা তখন শুনলাম রাস্তায় ঘোষণা দেয়া হচ্ছে ‘মদ খাওয়া এখন থেকে হারাম’, তৎক্ষণাৎ আমি হাত থেকে মদের জগ ছুড়ে ফেললাম এবং সাহাবারা সকলে হাত থেকে মদের গ্লাস ফেলে দিলেন। যাদের মুখে মদ লেগে ছিল, তারা সেটা মুখ থেকে থু থু দিয়ে ফেলে দিলেন।তাদের মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন যারা মদ গিলে ফেলেছেন বিধায় বমি করে পেট থেকে মদটুকু উগলে দিতে চেষ্টা করলেন। বলা হয়ে থাকে, মদীনার রাস্তায় মদের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।

মদ হারাম এই খবর শোনামাত্র সকলের তৎক্ষণাৎভাবে সে আদেশ পালন করল, কোন পুলিশের ভয় ছাড়া, US কংগ্রেস কিংবা ন্যাশনাল গার্ডের হস্তক্ষেপ ছাড়া। প্রয়োজন হল না কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা লক্ষ ডলারের। কাউকে জেলে ছোড়ার প্রয়োজনও পড়ল না, বাস্তবায়িত হল আল্লাহর হুকুম, কেন ? কিভাবে একই আদেশ মদীনায় কাজ করল কিন্তু আমেরিকায় নয় ? পার্থক্যটা ঈমানে, তাক্বওয়ায়।

সাহাবারা নিজেদেরকে এভাবেই আল্লাহর দেয়া আদেশগুলো মানতে নিজেদের প্রস্তুত করেছিলেন, আমাদেরকেও তা করতে হবে। আর এটা সম্ভব হবে তখনই যখন আমরা আখিরাতের ব্যাপারে চিন্তা করব, আখিরাত সম্পর্কে জানব এবং কথা বলব। 





আতাতুর্ক তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল ১-৬

আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (১)

উসমানিয় খিলাফাতের রাজধানী থেকে একেবারে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র!! কিন্তু কিভাবে সম্ভব হলো এই অকল্পনীয় ব্যাপারটি?

ঊনিশ শতকের শুরুতেই তুরস্কের বিস্ময়কর পরিবর্তন সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ইতিহাসে একটি হতবুদ্ধিকর পরিস্থিতির জন্ম দেয়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে, উসমানিয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে, খিলাফাত বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে তুরস্ক নামের নতুন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্ম দেয়ার রেশ মুসলিম বিশ্ব এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তুরস্কের সরকার এবং সমাজব্যবস্থায় এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পিছনে মূল কারণ কি ছিল?

এর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মুস্তাফা কামাল পাশা। আতাতুর্ক নামেই যিনি বেশি পরিচিত। ১৯২০-৩০ এর দিকে তার নেতৃত্বেই আধুনিক সেক্যুলার তুরস্কের জন্ম হয় এবং তুর্কি সমাজে ইসলামকে পিছনে পাঠিয়ে দেয়া হয়।


 আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (২)

আতাতুর্কের উথান
১৯১৪ সালে উসমানিয়দের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত একটি মারাত্মক ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয়। উসমানিয় সাম্রাজ্য মূলত চলতো 'তিন পাশা' র ইচ্ছায়। এরা তিনজনই এককভাবে ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ এবং রাশিয়ার প্রতিপক্ষ জার্মানদের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। ফলস্বরূপ উসমানিয় সাম্রাজ্য দক্ষিণ দিক থেকে ব্রিটিশ, পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ান আর পশ্চিম দিক থেকে গ্রিক আক্রমণের মুখে পড়ে এবং ১৯১৮ সালে যখন যুদ্ধ শেষ হয়, শুধুমাত্র আনাতোলিয়ার মূল ভুমিটুকু ছাড়া বাকি সাম্রাজ্য বিজয়ী শক্তিগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়।

এই মধ্য আনাতোলিয়াতেই, মুস্তাফা কামাল তুর্কিদের জাতীয় বীর রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। রাজধানী ইস্তাম্বুল দখলের উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে একজন উসমানিয় অফিসার হিসেবে তিনি অসামান্য নেতৃত্বের পরিচয় দেন এবং আক্রমণটি রুখে দিতে সক্ষম হন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, কামালের আসল উদ্দেশ্য উন্মোচিত হয়। তার মূল লক্ষ্য ছিল তুর্কি জনগণের একমাত্র পরিচয় হিসেবে তুর্কি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটানো এবং বহুজাতিক উসমানিয় সাম্রাজ্যের পরিবর্তে শুধুমাত্র তুর্কি পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

মুস্তাফা কামালের নিজের ভাষ্যমতে,

"আরবদের ধর্ম (ইসলাম) গ্রহণ করার আগেও তুর্কিরা একটি মহান' জাতি ছিল। আরবদের ধর্ম গ্রহণ করার পর; এই ধর্ম আরব, পারসিক এবং মিশরীয়দের সাথে তুর্কিদের সমন্বয় তো করেই নি বরঞ্চ তুর্কি জাতির ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে তুর্কি জাতীয়তাবোধকে অসাড় করে দিয়েছে। আর এটিই স্বাভাবিক ছিল। কারণ মুহাম্মাদ যে ধর্মের গোড়াপত্তন করেছিল, তার উদ্দেশ্যই ছিল সকল জাতির উপর আরব জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করা।" — মুস্তাফা কামাল (নাগরিকত্বের দৃষ্টিভঙ্গি)


 আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (৩)

ইসলামের ইতিহাসের প্রতি মুস্তাফা কামালের এই তির্যক (সত্যি বলতে, বিকৃত) দৃষ্টিভঙ্গিই তার জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাকে উদ্বুদ্ধ করে। তুর্কি জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করে, ১৯২০ সালের তুর্কি স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি উসমানিয় সামরিক অফিসারদের তার অধীনে একত্রিত করে গ্রিক, ব্রিটিশ এবং ফ্রেঞ্চ দখলদার বাহিনীকে তুর্কি ভূমি থেকে বিতাড়িত করেন। ১৯২২ সালের মধ্যে বিদেশি আগ্রাসন থেকে তুর্কিদের সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করতে সক্ষম হন এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক প্রজাতান্ত্রিক তুরস্কের সূচনা করেন। নতুন তুরস্কের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় আংকারায় অবস্থিত গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি বা সংক্ষেপে জিএনএ'র হাতে। নবগঠিত তুর্কি সরকারের প্রধান হবেন জিএনএ নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট। স্বাভাবিকভাবেই নামটি ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক, মুস্তাফা কামাল পাশা। যিনি এখন আতাতুর্ক (তুর্কিদের পিতা) উপাধি গ্রহণ করেন।

উসমানিয় সালতানাত এবং খিলাফাতের বিলুপ্তি

প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল নতুন তুর্কি সরকার বোধহয় উসমানিয় সালতানাতের পরিবর্তে ইসলামের নতুন বাহক হিসেবেই কাজ করছে। জিএনএ একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে যাতে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয় এবং এটাও বলা হয় যে, প্রত্যেকটি আইনই ইসলামিক আইন বিশারদদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্যানেল কতৃক অনুমোদিত হতে হবে, যাতে কোন আইন শরি'আর সাথে সাংঘর্ষিক না হয়।


শেষ উসমানী খালিফ আব্দুল মেজিদ (১৯২২-২৪)
কিন্তু ইস্তাম্বুলে যতদিন একজন উসমানিয় সুলতানের অধীনে আরেকটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের অস্তিত্ব আছে, ততদিন এই নতুন সরকার স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছিল না। আংকারা এবং ইস্তাম্বুলের উভয় সরকারই তুরস্কের সার্বভৌম ক্ষমতা নিজেদের দাবি করতে থাকে এবং দু'টি সরকারের লক্ষ্যও ছিল বিপরীতধর্মী। ১২৯৯ সাল থেকে চলে আসা উসমানিয় সালতানাতকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে ১৯২২ সালের ১লা নভেম্বর আতাতুর্ক এই সমস্যার সমাধান করে ফেলেন! তিনি কিন্তু সাথে সাথেই খিলাফাতের বিলুপ্ত ঘটান নি। উসমানিয় খলিফাকে কোন ক্ষমতা ছাড়া প্রতীকী রূপে তিনি বহাল রাখেন।

এই পরিবর্তন যে তুর্কি জনগণের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করবে তা বুঝতে পেরে আতাতুর্ক এই বলে সাফাই গাইতে থাকেন যে, তিনি আসলে চিরাচরিত ইসলামিক সরকার ব্যাবস্থাতেই ফিরে যাচ্ছেন! নবম থেকে পনের শতাব্দী পর্যন্ত, অধিকাংশ আব্বাসিয় খলিফারই নিজস্ব কোন ক্ষমতা ছিল না। মূল কতৃত্ব ছিল উজির আর সেনাপতিদের হাতে। আতাতুর্ক ক্ষমতাহীন খিলাফাতের পক্ষে এই ব্যাখ্যা প্রচার করতে থাকেন।

রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর থেকে আবু বাকরকে দিয়ে যে খিলাফাত আরম্ভ হয়েছিল, তুরস্কের বাইরে বসবাসরত মুসলিমরা আতাতুর্কের এসব কার্যকলাপকে সেই খিলাফাতের উপরই আঘাত হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। বিশেষত ভারতে বসবাসরত মুসলিমরা তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং খিলাফাত আন্দোলনের সূচনা করে। তারা খিলাফাত রক্ষায় তুর্কি সরকারের পদক্ষেপ দাবি করে এবং এ বিষয়ে বহির্বিশ্বের সহায়তা কামনা করে।

আতাতুর্ক খিলাফাতের পক্ষে মুসলিমদের এই সমর্থনকে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং এই অভিযোগে ১৯২৪ সালের ৩রা মার্চ, আতাতুর্ক এবং জিএনএ খোদ খিলাফাতকেই বিলুপ্ত ঘোষণা করে! উসমানিয় পরিবারের বাকি সদস্যদের নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হয়।


 আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (৪)

ইসলামের উপর আঘাত

খিলাফাত উঠে যাওয়ায়, তুর্কি সরকারের জন্য ইসলামবিরোধী বিভিন্ন নীতি গ্রহণ অনেক সহজ হয়ে যায়। 'রাজনীতিকে ইসলাম মুক্তকরণ' এর নামে শিক্ষা ব্যবস্হাকে রাতারাতি সম্পূর্ণ বদলে ফেলা হয়। সেক্যুলার স্কুল গুলোর প্রসারের সুবিধার্থে ইসলামি শিক্ষা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। ধর্মীয় অবকাঠামো গুলোও ধ্বংস করা হয়। মাত্র দু'বছর আগে গঠিত শরি'আ কাউন্সিল বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ধর্মীয় বৃত্তি প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়। সূফীদের আস্তানাগুলো জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়। শরি'আ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে দেশের সকল কাযীকে বরখাস্ত করা হয়।

ইসলামের উপর আতাতুর্কের আক্রমণ শুধুমাত্র সরকারী পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তুর্কিদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকেও আতাতুর্কের সেক্যুলার নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়:

° পাগড়ি বা টুপি পড়া নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবর্তে পশ্চিমা অনুকরণে হ্যাট পরিধান করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

° হিজাবকে হাস্যকর পোশাক বর্ণনা করে সরকারী ভবনগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

° হিজরি ক্যালেন্ডারের পরিবর্তে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করা হয়।

° ১৯৩২ সালে আরবিতে আযান দেয়া নিষিদ্ধ করে তুর্কি ভাষায় আযান চালু করা হয় এবং দেশের হাজার হাজার মাসজিদে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়।

° জুমাবারের পরিবর্তে শনিবার এবং রবিবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।

সব শেষে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বর্ণনা করা ধারাটি সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়। আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিমালা সেই স্থান দখল করে নেয়।


আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (৫)

ভাষা সংস্কার

আতাতুর্ক খুব ভাল করেই জানতেন যদি তুর্কি জনগণ প্রতিবাদ করতে শুরু করে, এসব সংস্কার ব্যর্থ হয়ে যাবে। এই নতুন ব্যাবস্থার সবচেয়ে বড় হুমকি ছিল তুর্কিদের ইতিহাস। নবম শতাব্দী থেকেই তুর্কিদের ইতিহাস ইসলামের সাথে একীভূত। নতুন প্রজন্মকে তাদের ইতিহাস থেকে দূরে রাখতে আতাতুর্ক অতীতটাই দূর্বোধ্য করে দেয়ার পরিকল্পনা করলেন।

সেই সময় তুর্কিদের শিক্ষার হার খুবই কম ছিল। শিক্ষার হার বাড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে আতাতুর্ক আরবি বর্ণমালার পরিবর্তে ল্যাটিন চালু করলেন। নবম শতাব্দীতে ইসলামে প্রবেশ করার সময় থেকে, পারসিকদের মতই তুর্কি ভাষা লেখা হতো আরবি বর্ণে। যেহেতু তুর্কিদের লিখিত সব বইপত্রই আরবি বর্ণে লেখা ছিল, তারা কুরআন এবং ইসলামি সাহিত্য বা আইনকানুন খুব সহজেই পড়তে পারতো। ইসলামের সাথে তুর্কিদের এই সম্পর্ককে আতাতুর্ক হুমকি মনে করলেন।

ল্যাটিন বর্ণ চালুর সাথে সাথে আতাতুর্ক আরবি শব্দগুলোর তুর্কি প্রতিশব্দ খুঁজে বের করতে একটি কমিশন গঠন করলেন। তার জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে আতাতুর্ক এমন একটা ভাষা চাচ্ছিলেন যা হবে বিশুদ্ধ তুর্কি ভাষা। অর্থাৎ উসমানিয় সময়কালীন হারিয়ে যাওয়া বা অপ্রচলিত হয়ে যাওয়া পুরানো তুর্কি শব্দগুলো তিনি ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেন।

আতাতুর্কের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভাষা সংস্কার খুবই সফল হয়েছিল। কয়েক দশকের ভিতর উসমানিয় তুর্কি ভাষা কার্যকারিতা হারিয়ে ফেললো। নতুন প্রজন্মের সাথে পুরানো প্রজন্মের জেনারেশন গ্যাপ সৃষ্টি হলো, কারণ তাদের মধ্যকার দৈনন্দিন কথাবার্তাও কঠিন হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু নতুন প্রজন্ম অতীত সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, তুর্কি সরকার আতাতুর্কের তুর্কি জাতীয়তাবাদের সহায়ক পছন্দমত ইতিহাস গিলিয়ে দিতে সফল হয়।



আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (৬) *সমাপ্ত*

ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ক

তুর্কিদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা থেকে ইসলামকে মুছে দিতে এই সব সংস্কার কার্যকর ভূমিকা পালন করে। নিজেদের ঐতিহ্য, ভাষা আর ধর্ম সংরক্ষণে ধর্মীয় মানসিকতাসম্পন্ন তুর্কিদের (যেমন সাইদ নুসরি) স‍র্ব্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও সরকার সেক্যুলার নীতি গ্রহণে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। ৮০ বছরেরও বেশি সময় ব্যাপি তুর্কি সরকার কট্টর ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখে। যখনই কোন সরকার ইসলামি ধারায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তখনই সামরিক বাহিনী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির রক্ষকের ভূমিকা পালন করে চলেছে।

১৯৫০ সালে, আদনান মান্দ্রেস আরবি আযান ফিরিয়ে আনার ইশতিহার দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। যদিও তিনি সফল হয়েছিলেন, ১৯৬০ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং একটি সাজানো বিচারের পর তাকে মৃত্যদন্ড দেয়া হয়। নিকট অতীতে ১৯৯৬ সালে, নেকমেট্টিন এরবাকান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে নিজেকে প্রকাশ্যে ইসলামপন্থী ঘোষণা দেন। আগের মতই সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করে এবং ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র এক বছরের মাথায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

ইসলাম এবং আধুনিক তুরস্কের সম্পর্ক একটি জটিল আকার ধারণ করেছে। সমাজের একাংশ দৃঢ়ভাবে আতাতুর্কের নীতিকে সমর্থন করে এবং বিশ্বাস করে যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামকে ধারণ করার কোন সুযোগ নেই। সমাজের অন্য অংশ ইসলামের প্রতি সহনশীল একটি সরকার এবং সমাজের প্রত্যাশী। তারা বাকি মুসলিম বিশ্বের সাথে আরো গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আদর্শগতভাবে বিবদমান দুই গোষ্ঠীর মধ্যকার এই বিরোধ মিটে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা আপাতত আমরা দেখতে পাচ্ছি না।




উমার আল মুখতার