শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৪

জামাতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভাইদের কাছে প্রশ্নঃ


জামাতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভাইদের কাছে প্রশ্নঃ
আপনারা কি মনে করেন, ইসলামী শরীয়াতের বিধানকে বাতিল করে এই দেশে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী ব্রিটিশ আইন চালু করার মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সরকারগুলো প্রকাশ্য কুফরীতে লিপ্ত?
(ক) যদি আপনারা মনে করেন, এরা সুষ্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ও ক্বিতাল করে, তাদেরকে হটিয়ে ইসলামী সরকার আনয়নের চেষ্টা করতে আপনারা ইসলামী শরীয়াত অনুযায়ী বাধ্য। উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) বর্ণিত তিনি বলেনঃ
دَعَانَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْنَاهُ فَكَانَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةٍ عَلَيْنَا وَأَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ قَالَ إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنْ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ
অর্থাৎ, “রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে ডাকলেন এবং আমরা তাকে বাইয়াত দিলাম। তিনি তখন আমাদের থেকে যে বাইয়াত নেন, তার মধ্যে ছিল – ‘আমরা শুনবো ও মানবো, আমাদের অনুরাগে ও বিরাগে, আমাদের সংকটে ও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং আমাদের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিলেও যোগ্য ব্যক্তির সাথে আমরা নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল করবো না।’ তিনি বলেন, যতক্ষণ না তোমরা তার মধ্যে প্রকাশ্য কুফরী দেখতে পাবে এবং তোমাদের কাছে এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট দলীল থাকবে।’” (মুত্তাফাকুন আলাইহি)

উম্মাহর ইমামগণের মধ্যে এবং আমাদের মাজহাবে এই ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, কোন মুসলিম এলাকার শাসকের মধ্যে এই রকম সুষ্পষ্ট কুফরী বা কুফরুন বাওয়াহ দেখা যায়, তাহলে তার সাথে সশস্ত্র জিহাদ-ক্বিতাল করে, তাকে হটিয়ে ইসলামী শরীয়াত জারি করা হচ্ছে ঐ এলাকার সামর্থ্যবানদের উপর ফরজে আইন। আর সেই শাসকের সমর্থনে যদি কোন বাহিনী থাকে তবে ঐ মুরতাদ বাহিনীসহ ঐ শাসককে হটানো হচ্ছে ফরজে আইন। এ ব্যাপারে ইজমা উল্লেখ করে ইমাম নববী (রঃ) বলেছেন,
قال القاضي عياض أجمع العلماء على أن الإمامة لا تنعقد لكافر وعلى أنه لو طرأ عليه الكفر انعزل قال وكذا لو ترك إقامة الصلوات والدعاء إليها قال وكذلك عند جمهورهم البدعة قال وقال بعض البصريين تنعقد له وتستدام له لأنه متأول قال القاضي فلو طرأ عليه كفر وتغيير للشرع أو بدعة خرج عن حكم الولاية وسقطت طاعته ووجب على المسلمين القيام عليه وخلعه ونصب أمام عادل أن أمكنهم ذلك فإن لم يقع ذلك الا لطائفة وجب عليهم القيام بخلع الكافر ولا يجب في المبتدع إلا إذا ظنوا القدرة عليه فإن تحققوا العجز لم يجب القيام وليهاجر المسلم عن أرضه إلى غيرها ويفر بدينه
“কাযী ইয়াজ (রঃ) বলেন, ‘এ ব্যাপারে আলেমদের ইজমা রয়েছে যে, কাফিরের হাতে নেতৃত্ব দেয়া যাবে না; সুতরাং তার থেকে যদি কুফরী প্রকাশ পায়, তাহলে তাকে অপসারণ করতে হবে।’” ......... কাযী ইয়াজ (রঃ) আরো বলেন, “সুতরাং তার থেকে কোন কুফরী বা শরীয়াহ পরিবর্তন বা বিদয়াত প্রকাশ পেলে, সে তার দায়িত্ব থেকে খারিজ হয়ে গেল এবং তার আনুগত্যের অধিকার সে হারালো; আর এ অবস্থায় মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব যে, তারা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, তাকে অপসারণ করবে এবং একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক নিয়োগ করবে যদি তাদের পক্ষে সম্ভব হয়। আর যদি একদল মানুষ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এটি সম্ভব না হয় তবে ঐ দলটিকে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং ঐ কাফিরকে অপসারণ করতে হবে। তবে বিদ’আতীর ক্ষেত্রে এটি আবশ্যক নয় যদি না তারা মনে করে যে তারা এটি করতে সক্ষম। অর্থাৎ যদি সত্যিই অক্ষমতা বিরাজ করে তাহলে বিদ্রোহ করা আবশ্যক নয়, তবে মুসলমানদেরকে ঐ এলাকা থেকে অন্য কোথাও তাদের দ্বীন নিয়ে হিজরত করতে হবে।” (সহীহ মুসলিম বি শারহুন নববী, কিতাবুল ইমারাহ ১২/২২৮)

মুওয়াত্বায়ে মালেকের প্রসিদ্ধ শরাহ আত-তামহীদ এর মধ্যে ইবনে আবদীল বার (রহ.) বলেন:
فإنّ من ردّ ، وامتنع عن قبول حكم الله - تعالى - فهو كافر بالإجماع ، وإن كان مقرّاً بهذا الحكم ، "يقول إسحاق بن راهويه : وقد أجمع العلماء أن على من دفع شيئاً أنزله الله .. وهو مع ذلك مقر بما أنزل الله أنه كافر)التمهيد باختصار (4/226
যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান মেনে নেয়া থেকে বিরত থাকে ও তা প্রত্যাখ্যান করে, সে সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের হয়ে যায়। যদিও সে এই বিধানকে স্বীকার করে। ইসহাক বিন রাহবিয়া বলেন: সকল আলেমগণ এই ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর অবর্তীন কোন একটি বিধানকেও প্রত্যাখ্যান করে নিশ্চিতভাবে কাফের হয়ে যায়। যদিও সে সেটাকে আল্লাহর অবর্তীণ বিধান বলে স্বীকার করে। (আত তাহমিদ: ৪/২২৬)

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) বলেছেনঃ
وقال الداودي الذي عليه العلماء في أمراء الجور أنه إن قدر على خلعه بغير فتنة ولا ظلم وجب وإلا فالواجب الصبر وعن بعضهم لا يجوز عقد الولاية لفاسق ابتداء فإن أحدث جورا بعد أن كان عدلا اختلفوا في جواز الخروج عليه والصحيح المنع إلا أن يكفر فيجب الخروج عليه
দাউদী (রঃ) বলেছেন, আলেমরা এ ব্যাপারে একমত যে, শাসক জালেম হলে যদি সামর্থ্য থাকে ফিতনা ও জুলুম ছাড়া তাকে অপসারণ করার তাহলে তা ওয়াজিব। তা না হলে ধৈর্য্য ধরা ওয়াজিব। অন্যরা বলেছেন, ফাসিক ও বিদয়াতীর কাছে নেতৃত্ব দেয়া যাবে না। যদি সে প্রথমে ন্যায়পরায়ণ থাকে এবং পরে বিদয়াত ও জুলুম করে তবে তার অপসারণ ও বিরুদ্ধাচারণের ব্যাপারে মতভেদ হয়েছে। সঠিক মত হচ্ছে, তা না করা যতক্ষণ না সে কুফরী করে। কুফরী করলে তাকে অপসারণ ও তার বিরুদ্ধাচারণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। (উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহুল বুখারী, কিতাবুল ফিতান, ৩০/১১০)

একই ইজমা ইবনে হাজার (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেনঃ এ ব্যাপারে ইবনে বাত্তাল (রঃ), ইবনে তীন (রঃ), দাউদী (রঃ) প্রমুখও ইজমা উল্লেখ করেছেন। ইবনে হাজার (রঃ) বলেন,
وملخصه أنه ينعزل بالكفر إجماعا " فيجب على كل مسلم القيام في ذلك، فمن قوي على ذلك فله الثواب، ومن داهن فعليه الإثم، ومن عجز وجبت عليه الهجرة من تلك الأرض
“আর এ ব্যাপারে ইজমার সারমর্ম হলো তাকে তার কুফরীর কারণে অপসারণ করতে হবে। সুতরাং প্রতিটি মুসলমানকে এই উদ্দেশ্যে রুখে দাঁড়াতে হবে, যার এই কাজ করার শক্তি আছে তার জন্য রয়েছে সওয়াব, যে এটা অবহেলা করবে সে গুনাহগার হবে, আর যে এতে অসমর্থ তার জন্য ওয়াজিব হবে ঐ এলাকা থেকে হিজরত করা।” (ফাতহুল বারী, কিতাবুল ফিতান, ১৩/১২৩)

(খ) যদি আপনারা মনে করেনঃ
তারা কুফরীতে লিপ্ত নয়, তাহলে তারা আপনাদের উপর বৈধ মুসলমান শাসক।
তাদেরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার চেষ্টা করা, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা, বিদ্রোহ করা আপনাদের জন্য হারাম।
বরং তাদের বিভিন্ন অন্যায়-অত্যাচারে আপনাদেরকে ধৈর্য্য ধরতে হবে।
যেমনটি রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ
عَلَيْكَ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ في عُسْرِكَ وَيُسْرِكَ، وَمَنْشَطِكَ وَمَكْرَهِكَ، وَأثَرَةٍ عَلَيْكَ - رواه مسلم
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমার প্রতি দুঃখে-সুখে, হর্ষে-বিষাদে এবং তোমার উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেওয়ার সময়ে (শাসকের) কথা শোনা ও (তার) আনুগত্য করা ফরজ”। (বুখারি, নাসায়ি, আহমদ)

ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সালামা ইবনে ইয়াযীদ আল-জুফী (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! আমাদের উপর যদি এরূপ শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাশীন হয় যারা তাদের অধিকার আমাদের নিকট থেকে পুরোপুরি আদায় করে নেয়, কিন্তু আমাদের প্রাপ্য অধিকার দেয় না, তখন আমাদের জন্য আপনার নির্দেশ কি? রাসূলুল্লাহ (সা) তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সালামা পুনরায় জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেনঃ তোমরা শ্রবণ করবে ও আনুগত্য করে যাবে। কারণ তাদের (পাপের) বোঝা তাদের উপর, তোমাদের বোঝা তোমাদের উপর। (মুসলিম)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ আমার পরে তোমরা অধিকার হরণ ও বহু অপছন্দনীয় জিনিসের সম্মুখীন হবে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে তার জন্য আপনার নির্দেশ কি? তিনি বলেনঃ এরূপ অবস্থায় তোমরা তোমাদের নিকট প্রাপ্য যথারীতি পরিশোধ করবে এবং তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে। (বুখারী, মুসলিম)
হুজাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি লম্বা হাদিসে এসেছে, রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“একসময় এমন শাসক হবে, যারা আমার দেখানো হেদায়াতের পথ অনুসরণ করবে না, আমার সুন্নাহও অনুসরণ করবে না। তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি হবেঃ যাদের অন্তর হবে শয়তানের, কিন্তু শরীরটা মানুষের। তিনি (হুজাইফা রাঃ) বললেন, আমি এই অবস্থায় পতিত হলে কি করবো, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)? তিনি বললেন, তুমি শাসকের শ্রবণ ও আনুগত্য করতে থাকবে। যদিও সে তোমাদের পিঠে চাবুক মারে ও তোমাদের ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেয়, তবুও তোমরা তার শ্রবণ ও আনুগত্য করবে”। (সহীহ মুসলিম, ৪৫৫৪)

ইমাম তাহাবী (রঃ) তাঁর আক্বিদার সংকলনে উল্লেখ করেছেন, “এবং আমরা (আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহ) আমাদের শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও যুদ্ধে বিশ্বাস করি না, যদিও তারা জুলুম করে”।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেন, “এটা আহলে সুন্নাহর একটা প্রসিদ্ধ আক্বিদা এই যে, শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করা হালাল নয় যদিও তারা জুলুম করে”। (মিনহাজ আল সুন্নাহ ৩/৩৯০)
হে ভাইয়েরা, এখন এই হাসিনা-খালেদাদের ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কি?
যদি তারা কুফরী করছে মনে করে থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ও ক্বিতাল করছেন না কেন?
আর যদি তারা কুফরী করেনি মনে করে থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এত আন্দোলন, জ্বালাও-পোড়াও - এসবের মানে কি?
জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের ভাইরা, দয়া করে সুস্পষ্টভাবে উত্তর দিবেন। https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1409437959321419&set=a.1392468937684988.1073741828.100007656849525&type=1&stream_ref=10
জামাতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ভাইদের কাছে প্রশ্নঃ





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন