শুক্রবার, ২০ জুন, ২০১৪

হিন্দুস্তানের চুড়ান্ত যুদ্ধের হাদীস সমূহ

হিন্দুস্তানের চুড়ান্ত যুদ্ধের হাদীস সমূহ

রাসুল (সা) একদিন পূর্ব দিকে তাকেয়ে বড় বড় করে নিশ্বাস নিচ্ছিলেন, এমন অবস্থায় এক সাহাবি জিজ্ঞাস করল, ইয়া রাসুল আল্লাহ্, আপনি এমন করছেন কেন ?

রাসুল (সাঃ) বললেন আমি পূর্ব দিক থেকে বিজয়ের গন্ধ পাচ্ছি।
সাহাবি (রাঃ) জিজ্ঞাস করলেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ্ কিসের বিজয়ের গন্ধ পাচ্ছেন?

রাসুল (সাঃ) বললেন পূর্ব দিকে মুসলিম ও মুস্রিক ( যারা মূর্তি পূজা করে ) তাদের মাঝে একটি যুদ্ধ হবে, যুদ্ধ টা হবে অসম , মুসলিম সেনাবাহিনী সংখ্যায় খুব কম থাকবে, এবং মুস্রিকরা থাকবে সংখ্যায় অধিক।
মুসলিম রা এত মারা যাবা যে রক্তে মুসলিমদের পায়েয় টাঁকুনি পর্যন্ত ডুবে যাবে।

মুসলিম রা তিন ভাগে বিভক্ত থাকবে, এক সারি এত বড় মুস্রিক সেনাবাহিনী দেখে ভয় পেয়ে পালাবে ।

রাসুল (সাঃ) বললেন তারাই হোল জাহান্নামি।

আর এক ভাগ এর সবাই শহীদ হবেন।

শেষ ভাগ এ যারা থাকবে, তারা আল্লাহ্ আর উপর ভরসা করে যুদ্ধ করে যেতে থাকবে , এবং শেষ পর্যন্ত জয় লাভ করবেন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন – এই যুদ্ধ, বদর এর যুদ্ধের সমতুল্ল। সুবাহানাল্লাহ।
উনি এর ও বলেছেন, মুসলিম রা যে জেখানেই থাকুক না কেন , সবাই যেন ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।

হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন আমার উম্মতের দুটি দলকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করে দিবেন। একদল হল, যারা হিন্দুস্থান তথা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আরেক দল হল, যারা শেষ জামানায় হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ম (আ) এর সঙ্গী হবে। (নাসায়ী শরীফ খন্ড-১,পৃষ্ঠা-১৫২ ও তাবরানী)

এই হাদীসটি অন্য বর্ণনায় এভাবে এসেছে, রাসুল (সা) বলেছেন, আমার উম্মতের দুটি দলকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুন থেকে হিফাজত করবেন। একদল হল, যারা হিন্দুস্থান তথা ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। আরেক দল হল, যারা শেষ জামানায় হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ম (আ) এর সঙ্গী হবে। (মুসনাদে আহমাদ হাদিস-২২২৯৫, খ-১৬ পৃষ্ঠা-২৯৫, বায়হাকী খ-৯,পৃষ্ঠা-১৭৬, নাসায়ী শরীফ জিহাদ অধ্যায়)

হযরত আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত। রাসূল (সা) বলেছেন, এ উম্মতের মধ্যে একটি মিশন সিন্ধু ও হিন্দুস্থান তথা ভারতের দিকে পরিচালিত হবে। আমি যদি এ অভিযান পেয়ে যাই এবং জিহাদ করে শহীদ হতে পারি তাহলে এমনটিই করব। আর যদি জীবিত ফিরে আসি তাহলে আমি মুক্ত স্বাধীন আবু হুরায়রা হয়ে যাব। আল্রাহ আমাকে দোযখের আগুন থেকে মুক্ত করে দিবেন। (মাসনাদে আহমাদ,হাদিস-৮৮০৮, খ-৯ পৃষ্ঠা-১১)

হযরত আবু হুরায়রা আরও বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) আমাদেরকে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ওয়াদা নিয়েছিলেন।আমি যদি এ অভিযান পেয়ে যাই আহলে আমি যেন আমার জান-মাল এতে ব্যয় করি। আর যদি আমি এ যুদ্ধে নিহত হই তাহলে সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদরুপে পরিগনিত হব। আর যদি জীবিত ফিরে আসি তাহলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাব। (মাসনাদে আহমাদ,হাদিস-৭১২৮, খ-৬ পৃষ্ঠা-৫৩৩, সুনানে কুবরা, ইমাম নাসায়ী হাদিস ২/৪৩৮৩ খ-৩ পৃষ্ঠা-২৮)

আলোচ্য হাদিস সমূহে এন্টি ভারত মুসলিমের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ যে মুসলিম ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিহত হবে সে হবে শ্রেষ্ঠ শহীদ। আর যে মুসলিম লড়াই করে জীবিত ফিরে আসবে, সে হবে জাহান্নাম হতে মুক্ত স্বাধীন মুসলিম। এ থেকে আরও প্রতিয়মান হয় যে, যদি কোন মুসলিম ভারতপন্থিদের হাতে নিহত হয় সেও শ্রেষ্ঠ শহীদের মর্যাদা লাভ করবে। আর যদি কোন মুসলিম কোন ভারতপন্থির হাতে নির্যাতিত হবে, জখমী হবে তাহলে সেও জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ করবে ইনশাআল্লাহ ।

উনি বলেছেন খোরাসান অঞ্ছল থেকে কলেমা সম্বলিত পতাকাবাহী এক দল এই যুদ্ধ শুরু করবে।

পূর্ব দিকে আমরাও ও পড়ি , একসময় খোরাসান আমাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল যা এখন নেই।

আল্লাহ্ আমাকে ও আমাদের যেন ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার তৌফিক দান করেন ।

আমীন।







শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০১৪

খলিফা আব্দুল মাজিদ ইস্তাম্বুলের মসনদে।

ওসমানীয় খেলাফত চলছে তখন, ১৮৪৫ সাল।
খলিফা আব্দুল মাজিদ ইস্তাম্বুলের মসনদে।
এসময়ে এসেও ইউরোপের অবস্থা খুব একটা সুবিধার
ছিলনা, বিভিন্ন আর্থিক-সামাজিক সমস্যা বিপর্যস্ত
ছিল অনেক ইউরোপীয় দেশ। আয়ারল্যান্ডে এসময়
দেখা দেয় এক ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ। মহামারী টাইপের
রোগও ছড়িয়ে পড়ে ইংল্যান্ডের
প্রতিবেশী রাজ্যে, মারা যেতে থাকে হাজার
হাজার আদম সন্তান। এই দূর্ভিক্ষে প্রায় ১০ লাখ লোক
মারা যায়। আয়ারল্যান্ডের এই
দূর্দশা দেখে এগিয়ে আসেন খলিফা আব্দুল মাজিদ।
তিনি জরুরীভাবে ১০ হাজার স্টারলিং (যার
বর্তমান মূল্য প্রায় ১৭ লাখ মার্কিন ডলার) সাহায্য
পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন আয়ারল্যান্ডবাসীর জন্য।
কিন্তু বাধ সাথে ইউরোপের মোড়ল ইংল্যান্ড।
গোটা দুনিয়ায় লুণ্ঠন করে বেড়ানো ইংল্যান্ড
নিজেদের অধিনস্ত রাজ্যকে এই দূর্যোগেও মাত্র
২০০০ স্টারলিং এর বেশী সাহায্য
দেয়নি সেখানে কেন মুসলিম খলিফা তার ৫ গুণ
টাকা দিবে ! এ তো ইংল্যান্ডের মান-ইজ্জতের
ব্যাপার । রানী ভিক্টোরিয়া ইস্তাম্বুলকে এই
বলে সাবধান করে দেন
যে ইংল্যান্ডকে ডিংগিয়ে আয়ারল্যান্ডকে সাহায্য
দিতে যাওয়াটা রাজনৈতিক
এবং কূটনৈতিকভাবে বিপদজনক হতে পারে।
বাধ্য হয়ে খলিফা সাহায্যের পরিমাণ ১ হাজার
স্টারলিং এ নামিয়ে আনেন। এর পরেও এই অর্থের মূল্য
ছিল বর্তমান বাজার দরে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার
মার্কিন ডলার।
খলিফা আব্দুল মজিদ এতে সন্তুষ্ট হতে পারলেননা,
বারবার মনে হচ্ছিল তার যে এ অর্থে মৃত্যুর
কূপে পড়ে যাওয়া মানুষগুলোর কিছুই হবেনা হয়ত।
তিনি গোপনে ৩ টি জাহাজ ভর্তি করে খাবার
এবং ত্রাণ পাঠালেন আয়ারল্যান্ডের দিকে।
গোপেন বহু মাধ্যমে পাঠালেন নগদ অর্থ। মুসলিম
ত্রানবহরকে বৃটিশ সৈন্যরা আটকে দিল ডাবলিন
এবং বেলফাস্টের ঢোকার পথে। ওসমানীয়
সৈন্যরা দমে না গিয়ে ফেরার পথে ডাবলিনের
উত্তরে গোপনে ড্রগেডা নামের এক ছোট্ট শহরের
পাশে নোংগর করে গোপেন ত্রান সামগ্রী সেই
শহরের মেয়রের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডবাসীর
কাছে পৌছে দেয়।
ইউরোপের বাঘা বাঘা লুটেরা দেশ থাকতে মুসলিম
এক শাসকের এই ভালবাসা আর সাহায্য অভিভূত
করে আয়ারল্যান্ডের মানুষকে।
১৯৯৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রগেডা শহরের মেয়র
গডফ্রে খলিফা আব্দুল মজিদের এই সাহায্য
এবং অকৃত্রিম বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করেন এবং তৎকালীন
মুসলিম খেলাফতের সম্মানে একটি স্মৃতিফলক উদ্ধোধন
করেন।
এখনো যদি সেই ড্রগেডা শহরে যান তো দেখবেন
সেখানকার বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব 'ড্রগেডা ফুটবল ক্লাব'
এর লোগোতে ওসমানীয় খেলাফতের প্রতি সম্মান
জানানোর নিদর্শন হিসেবে মুসলমানদের প্রতীক
অর্ধচন্দ্র বা হেলাল-সেতারা অংকিত আছে।
এছাড়া ড্রগেডা কোর্ট অফ আর্মসের লোগোতেও
অংকিত আছে মুসলিম খেলাফতের গৌরবান্বিত
ইতিহাস।
এই আয়ারল্যান্ডেও কতিপয় উগ্র খৃষ্টান মুসলমানদের
বিরুদ্ধে কূৎসা রটায়, মৌলবাদী-ধর্মান্ধ এসব
আখ্যা দিয়ে ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রিয়
নবীকে গালিগালাজ করে।
তারা গালি দেবার আগে যদি মৌলবাদীদের এসব
ইতিহাসগুলো পড়ে দেখত !
আফসোস ! আমরাই বা কতটুকু জানি নিজেদের
ইতিহাস !
















এরা আমার আপনার ফিলিস্তিনী ভাই
বোন! ভাবছেন এরা এভাবে কাঁদছে কেন!?
একটি বার এদের খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছেন আপনি?
আপনার কাছে তো এখন আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলে ছাড়া অন্য কোন কিছুরই খবর
নেই! আপনি তো এখন রাসুল সা.এর সেই হাদীস
ও ভুলে গিয়েছেন যে : মুসলমান মুসলমানের ভাই!
হ্যাঁ হ্যাঁ ....এরা আমার আপনার মুসলমান
ভাই-বোন! আমি আপনি যখন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বলে চিল্লাচ্ছি,
তখন এরা ইসরাইলী মানুষরুপী জানোয়ার মার্কা সেনাদের হাত থেকে প্রাণ রক্ষা করার জন্য
বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্তনাদ করছে! আর অঝরে অশ্রু ঝরাচ্ছে! এমন অবস্থার পরও সেই কুফফারদের
সাথে গলায় গলা মিলিয়ে ফুটবল বিশ্বকাপের নামে বিশ্ব উন্মাদনায় শরীক হয়ে বিশ্বের সকল নির্যাতিত
মুসলমান ভাইদের সাথে উপহাস করতে আপনার বুক কি একটুও কাঁপছে না?
বিশেষ দ্রঃ বিশ্ব উন্মাদনা বিরোধী পোষ্ট অনেকের কাছে অনেক খারাপ লাগছে!
লাগুক খারাপ! তবুও আমি গাফলতির ঘুমে ডুবে থাকা মুসলামানদের
কে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েই যাবো ইনশাআল্লাহ!







শুক্রবার, ৬ জুন, ২০১৪

মদ নিষিদ্ধ করে আইন পাস usa

১৯৩০ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্টে, কনগ্রেস মদ নিষিদ্ধ করে একটি আইন পাস করল। সুবহানাল্লাহ, মুসলিম-অমুসলিম সকলেই বুঝতে পারে মদ খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে আমেরিকার সরকার এই আইনটি বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নিল। এই ঘটনার পর প্রায় ৫ লক্ষ লোক জেলে গেল, মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় হল এই আইন বাস্তবায়নে,খুন হল হাজার হাজার লোক।

মজার ব্যাপার হল, মদ খাওয়ার পরিমাণে কম বেশ হলই না, উপরন্তু লোকজন নিজের ঘরে মদের তৈরি করতে শুরু করল। মদ উৎপাদনের প্রক্রিয়া বেশ অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ল। চার বছরের দুর্বিষহ সময়ের পর আমেরিকার সরকার এই আইন বাতি করল। তথাকথিত পরাক্রমশালী আমেরিকা এই আইন প্রয়োগ করতে পারল না,বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জাতি মদ নিষিদ্ধ করতে ব্যর্থ হল।

এবার আসুন আমরা ১৪০০ বছর আগে ফিরে যাই। জিবরীল (আঃ) রাসূল (সাঃ) এর কাছে আয়াত নিয়ে হাজির হলেন,

হে মুমিনগণ,এই যে মদ,জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। অতএব,এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।[সূরা মায়িদাঃ৯০]

মদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এই আয়াতটি আল্লাহর পক্ষে থেকে রাসূল (সাঃ) এর কাছে নাযিল হল। রাসূল (সাঃ) কোন পুলিশবাহিনী, সেনাবাহনী কিংবা ন্যাশনাল গার্ডের সাহায্য ছাড়া সাহাবাদের কাছে এই আয়াতটি পড়ে শুনালেন। সাহাবারা এটা শোনামাত্র রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে ঘোষণা করলেন, মদ খাওয়ার আর কোন বৈধতা ইসলামে নেই।

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, “আমি কয়জন সাহাবাকে মদ পরিবেশন করছিলাম এবং আমরা তখন শুনলাম রাস্তায় ঘোষণা দেয়া হচ্ছে ‘মদ খাওয়া এখন থেকে হারাম’, তৎক্ষণাৎ আমি হাত থেকে মদের জগ ছুড়ে ফেললাম এবং সাহাবারা সকলে হাত থেকে মদের গ্লাস ফেলে দিলেন। যাদের মুখে মদ লেগে ছিল, তারা সেটা মুখ থেকে থু থু দিয়ে ফেলে দিলেন।তাদের মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন যারা মদ গিলে ফেলেছেন বিধায় বমি করে পেট থেকে মদটুকু উগলে দিতে চেষ্টা করলেন। বলা হয়ে থাকে, মদীনার রাস্তায় মদের বন্যা বয়ে গিয়েছিল।

মদ হারাম এই খবর শোনামাত্র সকলের তৎক্ষণাৎভাবে সে আদেশ পালন করল, কোন পুলিশের ভয় ছাড়া, US কংগ্রেস কিংবা ন্যাশনাল গার্ডের হস্তক্ষেপ ছাড়া। প্রয়োজন হল না কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা লক্ষ ডলারের। কাউকে জেলে ছোড়ার প্রয়োজনও পড়ল না, বাস্তবায়িত হল আল্লাহর হুকুম, কেন ? কিভাবে একই আদেশ মদীনায় কাজ করল কিন্তু আমেরিকায় নয় ? পার্থক্যটা ঈমানে, তাক্বওয়ায়।

সাহাবারা নিজেদেরকে এভাবেই আল্লাহর দেয়া আদেশগুলো মানতে নিজেদের প্রস্তুত করেছিলেন, আমাদেরকেও তা করতে হবে। আর এটা সম্ভব হবে তখনই যখন আমরা আখিরাতের ব্যাপারে চিন্তা করব, আখিরাত সম্পর্কে জানব এবং কথা বলব। 





আতাতুর্ক তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল ১-৬

আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (১)

উসমানিয় খিলাফাতের রাজধানী থেকে একেবারে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র!! কিন্তু কিভাবে সম্ভব হলো এই অকল্পনীয় ব্যাপারটি?

ঊনিশ শতকের শুরুতেই তুরস্কের বিস্ময়কর পরিবর্তন সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ইতিহাসে একটি হতবুদ্ধিকর পরিস্থিতির জন্ম দেয়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে, উসমানিয় সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে, খিলাফাত বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে তুরস্ক নামের নতুন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্ম দেয়ার রেশ মুসলিম বিশ্ব এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তুরস্কের সরকার এবং সমাজব্যবস্থায় এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পিছনে মূল কারণ কি ছিল?

এর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মুস্তাফা কামাল পাশা। আতাতুর্ক নামেই যিনি বেশি পরিচিত। ১৯২০-৩০ এর দিকে তার নেতৃত্বেই আধুনিক সেক্যুলার তুরস্কের জন্ম হয় এবং তুর্কি সমাজে ইসলামকে পিছনে পাঠিয়ে দেয়া হয়।


 আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (২)

আতাতুর্কের উথান
১৯১৪ সালে উসমানিয়দের প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত একটি মারাত্মক ভুল হিসেবে প্রমাণিত হয়। উসমানিয় সাম্রাজ্য মূলত চলতো 'তিন পাশা' র ইচ্ছায়। এরা তিনজনই এককভাবে ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ এবং রাশিয়ার প্রতিপক্ষ জার্মানদের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। ফলস্বরূপ উসমানিয় সাম্রাজ্য দক্ষিণ দিক থেকে ব্রিটিশ, পূর্ব দিক থেকে রাশিয়ান আর পশ্চিম দিক থেকে গ্রিক আক্রমণের মুখে পড়ে এবং ১৯১৮ সালে যখন যুদ্ধ শেষ হয়, শুধুমাত্র আনাতোলিয়ার মূল ভুমিটুকু ছাড়া বাকি সাম্রাজ্য বিজয়ী শক্তিগুলোর মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়।

এই মধ্য আনাতোলিয়াতেই, মুস্তাফা কামাল তুর্কিদের জাতীয় বীর রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। রাজধানী ইস্তাম্বুল দখলের উদ্দেশ্যে পরিচালিত একটি ব্রিটিশ আক্রমণের বিরুদ্ধে একজন উসমানিয় অফিসার হিসেবে তিনি অসামান্য নেতৃত্বের পরিচয় দেন এবং আক্রমণটি রুখে দিতে সক্ষম হন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর, কামালের আসল উদ্দেশ্য উন্মোচিত হয়। তার মূল লক্ষ্য ছিল তুর্কি জনগণের একমাত্র পরিচয় হিসেবে তুর্কি জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটানো এবং বহুজাতিক উসমানিয় সাম্রাজ্যের পরিবর্তে শুধুমাত্র তুর্কি পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

মুস্তাফা কামালের নিজের ভাষ্যমতে,

"আরবদের ধর্ম (ইসলাম) গ্রহণ করার আগেও তুর্কিরা একটি মহান' জাতি ছিল। আরবদের ধর্ম গ্রহণ করার পর; এই ধর্ম আরব, পারসিক এবং মিশরীয়দের সাথে তুর্কিদের সমন্বয় তো করেই নি বরঞ্চ তুর্কি জাতির ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে তুর্কি জাতীয়তাবোধকে অসাড় করে দিয়েছে। আর এটিই স্বাভাবিক ছিল। কারণ মুহাম্মাদ যে ধর্মের গোড়াপত্তন করেছিল, তার উদ্দেশ্যই ছিল সকল জাতির উপর আরব জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করা।" — মুস্তাফা কামাল (নাগরিকত্বের দৃষ্টিভঙ্গি)


 আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (৩)

ইসলামের ইতিহাসের প্রতি মুস্তাফা কামালের এই তির্যক (সত্যি বলতে, বিকৃত) দৃষ্টিভঙ্গিই তার জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাকে উদ্বুদ্ধ করে। তুর্কি জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করে, ১৯২০ সালের তুর্কি স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি উসমানিয় সামরিক অফিসারদের তার অধীনে একত্রিত করে গ্রিক, ব্রিটিশ এবং ফ্রেঞ্চ দখলদার বাহিনীকে তুর্কি ভূমি থেকে বিতাড়িত করেন। ১৯২২ সালের মধ্যে বিদেশি আগ্রাসন থেকে তুর্কিদের সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করতে সক্ষম হন এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক প্রজাতান্ত্রিক তুরস্কের সূচনা করেন। নতুন তুরস্কের ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয় আংকারায় অবস্থিত গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বলি বা সংক্ষেপে জিএনএ'র হাতে। নবগঠিত তুর্কি সরকারের প্রধান হবেন জিএনএ নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট। স্বাভাবিকভাবেই নামটি ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের নায়ক, মুস্তাফা কামাল পাশা। যিনি এখন আতাতুর্ক (তুর্কিদের পিতা) উপাধি গ্রহণ করেন।

উসমানিয় সালতানাত এবং খিলাফাতের বিলুপ্তি

প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল নতুন তুর্কি সরকার বোধহয় উসমানিয় সালতানাতের পরিবর্তে ইসলামের নতুন বাহক হিসেবেই কাজ করছে। জিএনএ একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে যাতে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করা হয় এবং এটাও বলা হয় যে, প্রত্যেকটি আইনই ইসলামিক আইন বিশারদদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্যানেল কতৃক অনুমোদিত হতে হবে, যাতে কোন আইন শরি'আর সাথে সাংঘর্ষিক না হয়।


শেষ উসমানী খালিফ আব্দুল মেজিদ (১৯২২-২৪)
কিন্তু ইস্তাম্বুলে যতদিন একজন উসমানিয় সুলতানের অধীনে আরেকটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের অস্তিত্ব আছে, ততদিন এই নতুন সরকার স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছিল না। আংকারা এবং ইস্তাম্বুলের উভয় সরকারই তুরস্কের সার্বভৌম ক্ষমতা নিজেদের দাবি করতে থাকে এবং দু'টি সরকারের লক্ষ্যও ছিল বিপরীতধর্মী। ১২৯৯ সাল থেকে চলে আসা উসমানিয় সালতানাতকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে ১৯২২ সালের ১লা নভেম্বর আতাতুর্ক এই সমস্যার সমাধান করে ফেলেন! তিনি কিন্তু সাথে সাথেই খিলাফাতের বিলুপ্ত ঘটান নি। উসমানিয় খলিফাকে কোন ক্ষমতা ছাড়া প্রতীকী রূপে তিনি বহাল রাখেন।

এই পরিবর্তন যে তুর্কি জনগণের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করবে তা বুঝতে পেরে আতাতুর্ক এই বলে সাফাই গাইতে থাকেন যে, তিনি আসলে চিরাচরিত ইসলামিক সরকার ব্যাবস্থাতেই ফিরে যাচ্ছেন! নবম থেকে পনের শতাব্দী পর্যন্ত, অধিকাংশ আব্বাসিয় খলিফারই নিজস্ব কোন ক্ষমতা ছিল না। মূল কতৃত্ব ছিল উজির আর সেনাপতিদের হাতে। আতাতুর্ক ক্ষমতাহীন খিলাফাতের পক্ষে এই ব্যাখ্যা প্রচার করতে থাকেন।

রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর থেকে আবু বাকরকে দিয়ে যে খিলাফাত আরম্ভ হয়েছিল, তুরস্কের বাইরে বসবাসরত মুসলিমরা আতাতুর্কের এসব কার্যকলাপকে সেই খিলাফাতের উপরই আঘাত হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। বিশেষত ভারতে বসবাসরত মুসলিমরা তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং খিলাফাত আন্দোলনের সূচনা করে। তারা খিলাফাত রক্ষায় তুর্কি সরকারের পদক্ষেপ দাবি করে এবং এ বিষয়ে বহির্বিশ্বের সহায়তা কামনা করে।

আতাতুর্ক খিলাফাতের পক্ষে মুসলিমদের এই সমর্থনকে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং এই অভিযোগে ১৯২৪ সালের ৩রা মার্চ, আতাতুর্ক এবং জিএনএ খোদ খিলাফাতকেই বিলুপ্ত ঘোষণা করে! উসমানিয় পরিবারের বাকি সদস্যদের নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া হয়।


 আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (৪)

ইসলামের উপর আঘাত

খিলাফাত উঠে যাওয়ায়, তুর্কি সরকারের জন্য ইসলামবিরোধী বিভিন্ন নীতি গ্রহণ অনেক সহজ হয়ে যায়। 'রাজনীতিকে ইসলাম মুক্তকরণ' এর নামে শিক্ষা ব্যবস্হাকে রাতারাতি সম্পূর্ণ বদলে ফেলা হয়। সেক্যুলার স্কুল গুলোর প্রসারের সুবিধার্থে ইসলামি শিক্ষা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। ধর্মীয় অবকাঠামো গুলোও ধ্বংস করা হয়। মাত্র দু'বছর আগে গঠিত শরি'আ কাউন্সিল বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ধর্মীয় বৃত্তি প্রদান বন্ধ করে দেয়া হয়। সূফীদের আস্তানাগুলো জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা হয়। শরি'আ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে দেশের সকল কাযীকে বরখাস্ত করা হয়।

ইসলামের উপর আতাতুর্কের আক্রমণ শুধুমাত্র সরকারী পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তুর্কিদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকেও আতাতুর্কের সেক্যুলার নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়:

° পাগড়ি বা টুপি পড়া নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবর্তে পশ্চিমা অনুকরণে হ্যাট পরিধান করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

° হিজাবকে হাস্যকর পোশাক বর্ণনা করে সরকারী ভবনগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়।

° হিজরি ক্যালেন্ডারের পরিবর্তে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার চালু করা হয়।

° ১৯৩২ সালে আরবিতে আযান দেয়া নিষিদ্ধ করে তুর্কি ভাষায় আযান চালু করা হয় এবং দেশের হাজার হাজার মাসজিদে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়।

° জুমাবারের পরিবর্তে শনিবার এবং রবিবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।

সব শেষে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বর্ণনা করা ধারাটি সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়। আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিমালা সেই স্থান দখল করে নেয়।


আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (৫)

ভাষা সংস্কার

আতাতুর্ক খুব ভাল করেই জানতেন যদি তুর্কি জনগণ প্রতিবাদ করতে শুরু করে, এসব সংস্কার ব্যর্থ হয়ে যাবে। এই নতুন ব্যাবস্থার সবচেয়ে বড় হুমকি ছিল তুর্কিদের ইতিহাস। নবম শতাব্দী থেকেই তুর্কিদের ইতিহাস ইসলামের সাথে একীভূত। নতুন প্রজন্মকে তাদের ইতিহাস থেকে দূরে রাখতে আতাতুর্ক অতীতটাই দূর্বোধ্য করে দেয়ার পরিকল্পনা করলেন।

সেই সময় তুর্কিদের শিক্ষার হার খুবই কম ছিল। শিক্ষার হার বাড়ানোর অজুহাত দেখিয়ে আতাতুর্ক আরবি বর্ণমালার পরিবর্তে ল্যাটিন চালু করলেন। নবম শতাব্দীতে ইসলামে প্রবেশ করার সময় থেকে, পারসিকদের মতই তুর্কি ভাষা লেখা হতো আরবি বর্ণে। যেহেতু তুর্কিদের লিখিত সব বইপত্রই আরবি বর্ণে লেখা ছিল, তারা কুরআন এবং ইসলামি সাহিত্য বা আইনকানুন খুব সহজেই পড়তে পারতো। ইসলামের সাথে তুর্কিদের এই সম্পর্ককে আতাতুর্ক হুমকি মনে করলেন।

ল্যাটিন বর্ণ চালুর সাথে সাথে আতাতুর্ক আরবি শব্দগুলোর তুর্কি প্রতিশব্দ খুঁজে বের করতে একটি কমিশন গঠন করলেন। তার জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে আতাতুর্ক এমন একটা ভাষা চাচ্ছিলেন যা হবে বিশুদ্ধ তুর্কি ভাষা। অর্থাৎ উসমানিয় সময়কালীন হারিয়ে যাওয়া বা অপ্রচলিত হয়ে যাওয়া পুরানো তুর্কি শব্দগুলো তিনি ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেন।

আতাতুর্কের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভাষা সংস্কার খুবই সফল হয়েছিল। কয়েক দশকের ভিতর উসমানিয় তুর্কি ভাষা কার্যকারিতা হারিয়ে ফেললো। নতুন প্রজন্মের সাথে পুরানো প্রজন্মের জেনারেশন গ্যাপ সৃষ্টি হলো, কারণ তাদের মধ্যকার দৈনন্দিন কথাবার্তাও কঠিন হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু নতুন প্রজন্ম অতীত সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল, তুর্কি সরকার আতাতুর্কের তুর্কি জাতীয়তাবাদের সহায়ক পছন্দমত ইতিহাস গিলিয়ে দিতে সফল হয়।



আতাতুর্ক যেভাবে তুরস্ককে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন: ইসলামিক সাম্রাজ্য থেকে একেবারে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। কিভাবে সম্ভব হলো? (৬) *সমাপ্ত*

ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ক

তুর্কিদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা থেকে ইসলামকে মুছে দিতে এই সব সংস্কার কার্যকর ভূমিকা পালন করে। নিজেদের ঐতিহ্য, ভাষা আর ধর্ম সংরক্ষণে ধর্মীয় মানসিকতাসম্পন্ন তুর্কিদের (যেমন সাইদ নুসরি) স‍র্ব্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও সরকার সেক্যুলার নীতি গ্রহণে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। ৮০ বছরেরও বেশি সময় ব্যাপি তুর্কি সরকার কট্টর ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখে। যখনই কোন সরকার ইসলামি ধারায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে, তখনই সামরিক বাহিনী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির রক্ষকের ভূমিকা পালন করে চলেছে।

১৯৫০ সালে, আদনান মান্দ্রেস আরবি আযান ফিরিয়ে আনার ইশতিহার দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। যদিও তিনি সফল হয়েছিলেন, ১৯৬০ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং একটি সাজানো বিচারের পর তাকে মৃত্যদন্ড দেয়া হয়। নিকট অতীতে ১৯৯৬ সালে, নেকমেট্টিন এরবাকান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে নিজেকে প্রকাশ্যে ইসলামপন্থী ঘোষণা দেন। আগের মতই সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করে এবং ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র এক বছরের মাথায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

ইসলাম এবং আধুনিক তুরস্কের সম্পর্ক একটি জটিল আকার ধারণ করেছে। সমাজের একাংশ দৃঢ়ভাবে আতাতুর্কের নীতিকে সমর্থন করে এবং বিশ্বাস করে যে, রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামকে ধারণ করার কোন সুযোগ নেই। সমাজের অন্য অংশ ইসলামের প্রতি সহনশীল একটি সরকার এবং সমাজের প্রত্যাশী। তারা বাকি মুসলিম বিশ্বের সাথে আরো গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আদর্শগতভাবে বিবদমান দুই গোষ্ঠীর মধ্যকার এই বিরোধ মিটে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা আপাতত আমরা দেখতে পাচ্ছি না।




উমার আল মুখতার
 
 

শুক্রবার, ১৬ মে, ২০১৪

শাইখ তাকি উদ্দিন আন-নাবহানি’র সংগ্রামী জীবনী

শাইখ তাকি উদ্দিন আন-নাবহানি’র সংগ্রামী জীবনী

এটা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার ইচ্ছা যে আমরা মহাকালের একেবারে শেষ সময় অতিবাহিত করছি। এটা এমন এক যুগ যখন কুফরের কালো রাত আমাদের ঘিরে রেখেছে । আল্লাহ্‌’র জমিনে আল্লাহ্‌র আইন আজ নির্বাসিত, অথচ অপরাধ ও শোষণের অবাধ চর্চা সর্বত্র। ইনশাআল্লাহ্‌, এই কালো রাত একদিন শেষ হবে, খিলাফাহ’র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নতুন দিনের সূর্য উদয় হবে, সেই সাথে যারা নির্ঘুমভাবে সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে তাদের জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসবে। এই খিলাফাহ’র ডাক, যা হারিয়ে গিয়েছিল, তা এখন মুসলিম বিশ্ব ছাড়িয়ে অমুসলিম রাষ্ট্রের মানুষের মুখে ও ছড়িয়ে পরেছে ।আলহামদুলিল্লাহ,এখনই সময় সকল অন্ধকার কে ছিন্ন করার এবং একটি উজ্জ্বল ভোরের আলো নিয়ে আসার।

এই লিখাটি শাইখ তাকি উদ্দিন আন-নাবহানি’র সংগ্রামী জীবনের বৈচিত্রময়তা তুলে ধরার জন্য একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ।যিনি হারিয়ে যাওয়া মুসলিমদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খিলাফতের ডাক কে পুনরায় ফিরিয়ে এনেছিলেন মানুষের মাঝে । সেই শাইখ তাকি উদ্দিন আন-নাবহানি যিনি খিলাফত প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের দল হিযবুত তাহরির এর প্রতিষ্ঠাতা আমীর। যে আন্দোলনের নেতৃত্বে আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয় পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি।

শাইখ তাকি উদ্দিন আন-নাবহানি (রাহিমাহুল্লাহ) এর জন্ম ও পরিচয়ঃ

শাইখ তাকি উদ্দিন বিন ইব্রাহিম বিন মুস্তাফা বিন ইসমাইল বিন ইউসুফ আন-নাবহানি।আরবি تقي الدين النبهاني;
শাইখ তাকি উদ্দিন আন-নাবহানি “আন-নাবহান” গোত্রের উত্তর ফিলিস্তিনের “আজ্জাম” নামক গ্রামে ১৯০৯ সালের ১লা জানুয়ারি জন্ম গ্রহন করেন । শাইখ তাকি উদ্দিন আন-নাবহানি এমন একটি পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন যেই পরিবারটি জ্ঞান ও তাকওয়ার জন্য বেশ পরিচিত ছিল। তাঁর বাবা শাইখ ইব্রাহিম একজন আইনজ্ঞ ও মা’আরিফ মন্ত্রনালয়ের (শিক্ষা ও কলা) “উলুম–ই-শরই” এ বিজ্ঞ ছিলেন। তাঁর মা ও “উলুম–ই-শরই” এ বিজ্ঞ ছিলেন যা তিনি তাঁর বাবা ইউসুফ আন-নাবাহানি থেকে অর্জন করেছিলেন।

তাঁর নানা শাইখ ইউসুফ নাবহানি সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী যে তথ্য পাওয়া যায় তা অনেকটা এরকম – “শাইখ ইউসুফ বিন ইসমাইল বিন ইউসুফ বিন হাসসান বিন মোহাম্মাদ আল নাবাহানি আল শাফে’য়ী – ওরফে আবু আল মাহাসিন একজন কবি, সুফি এবং একজন জ্ঞানি ব্যাক্তি ছিলেন। তাঁকে তৎকালীন সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিচারক হিসেবে গন্য করা হত। তিনি নাবলুস এলাকার জেনিন শহরের বিচারক হিসেবে দায়িত্বপালন করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইস্তানবুল শহরে চলে যান যেখানে মসুল এলাকার কাভি সান্দাক শহরে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। অতঃপর তিনি আজকিয়া ও আল-কুদস এর আদালতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তারপর তিনি বেইরুতের আদালতের দায়িত্ব পান। তিনি ৪৮টি বই লিখেন।

শাইখ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানি’র ইসলামি ব্যাক্তিত্বের পিছনে তাঁর পরিবারের ভুমিকা অনন্য। তাই, তিনি মাত্র ১৩ বছরে কোরআন হিফজ করেন। প্রথম থেকেই তাঁর নানা উসমানী খিলাফতের পক্ষে যেসব রাজনৈতিক দলের অনুসুচনা করেছিলেন তা থেকে তিনি রাজনৈতিক বোধসম্পন্ন সচেতনতা অর্জন করেন।শাইখ তাকি উদ্দিন তাঁর নানা কর্তৃক আয়োজিত শরয়ী বিধিবিধান সংক্রান্ত আলোচনা/বিতর্কে সবসময়ই উপস্থিত হতেন এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে সমকালিন বিষয়ের উপর প্রশ্ন করতেন । তখন থেকেই তিনি তাঁর নানার চোখে অন্যরকম ভাবে ধরা পড়েন এবং তাঁর নানা তাঁর বাবকে রাজি করান উলুম-ই-শরঈ অধ্যয়নের জন্য তাঁকে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে।

শাইখ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানি’র বয়স যখন ষোল তখন তিনি শেখ আল আজহার ইউনিভার্সিটিতে (জামেয়াতুল আজহার) অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হোন এবং একই সালে বৃত্তিসহকারে কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। তাঁকে সম্মান সূচক “শুহাদা আল ঘুরবা” সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। তারপর তিনি আল আজহার ইউনিভার্সিটির সংশ্লিষ্ট একটি বিজ্ঞান-কলেজে ভর্তি হোন। তাঁর নানার বিভিন্ন ছাত্র যেমন শাইখ মোহাম্মাদ আল খিজার (রঃ) এর পাঠদানে সর্বদা অংশগ্রহন করতেন। তৎকালীন সময়ে ছাত্রদের জন্য এ ধরণের পাঠ-চক্রে অংশগ্রহণ করার নিয়ম প্রচলিত ছিল, যার কারণে শাইখ তাকি উদ্দিন বিজ্ঞান-কলেজের ছাত্র হওয়ার পরও ইসলামি পাঠ-চক্রে অংশগ্রহন করে যেতেন। তাঁর সহপাঠী এবং শিক্ষকরাও ঈর্ষা করতেন তাঁর গভীর চিন্তা, মতামত এবং কায়রো বা অন্যান্য ইসলামি ভু-খন্ডে বিতর্কের জন্য।

পরবর্তীতে শাইখ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানি যেসব ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তা হল – আল আজহার ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারমেডিয়েট, আল আজহার ইউনিভার্সিটি থেকে “শাহাদা তাল ঘুরবা”, কায়রো থেকে আরবি ভাষার ও সাহিত্যে ব্যাচালর ডিগ্রি (গ্র্যাজুয়েশান), আল আজহার ইউনিভার্সিটির সাথে সংশ্লিষ্ট শরয়ী আদালত সম্পর্কিত ইন্সটিটিউট “মা’হাদ আল ‘আলা” থেকে “দ্বার আল’ উলুম” ডিগ্রি, “শাহাদা তাল ‘আলামিয়াহ” – মাস্টার্স ডিগ্রি (পোস্ট গ্র্যাজুয়েশান) ১৯৩২ সালে।
গ্র্যাজুয়েশান সম্পূর্ণ হওয়ার পরে শাইখ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানি তার জন্মস্থান ফিলিস্তিনে চলে আসেন এবং ১৯৩৩ সালে সেখানের ইসলামিক কলেজে শিক্ষকতা পেশা হিসেবে বেছে নেন ।১৯৩৮ সালে তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে মা’আরিফ মন্ত্রনালয়ের শরীয়া শিক্ষা বিভাগে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তাঁর পদোন্নতি হয় এবং তাঁকে হাইফা নগরীর শরীয়া কোর্টের এটর্নি করে স্তানান্তর করা হয়। অতঃপর ১৯৪৬ সালে তিনি রামাল্লাহ নগরীর আদালতের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। ইহুদিদের দ্বারা ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখলের পর তিনি সিরিয়াতে চলে যান কিন্তু একই বছরে তিনি আবার ফিলিস্তিনে ফেরত আসেন এবং আল-কুদস এর শরীয়া কোর্টের বিচারক হিসেবে চাকরি করেন। তারপর তিনি ১৯৪৮ সালে শরীয়া হাই কোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। অতঃপর ১৯৫১ সালে তিনি বিচারক এর পদ থেকে ও সরে দাঁড়ান ।

শাইখ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানি ছিলেন জ্ঞানের সাগর এবং প্রায় জ্ঞানের প্রায় সব শাখায় পান্ডিত্যের অধিকারী। ছিল। তাঁর ব্যাক্তিত্ব সম্ভ্রান্ত ছিল এবং তাঁর বক্তব্য অন্যকে প্রভাবিত করত। তাঁর যুক্তি অন্যকে সন্তুষ্ট করত। তিনি লক্ষ্য ছাড়া আন্দোলন, ব্যাক্তিগত আক্রমণ ও উম্মাহ’র স্বার্থ থেকে বিচ্যুত হওয়াকে খুব অপছন্দ করতেন। তিনি মানুষের ব্যাক্তিগত জীবনে মগ্ন হয়ে যাওয়াকে অবজ্ঞা করতেন। তিনি যেন রাসূলাল্লাহ (সাঃ) এর একটি হাদীসের ঠিক জীবন্ত প্রতিরুপ, যার অর্থ অনেকটা এরকম, “যে ব্যাক্তি মুসলিম উম্মাহ’র স্বার্থে নিজেকে নিযুক্ত করে না, সে তাদের মধ্যে থেকে নয়”।তিনি এই হাদীসটি বার বার ব্যাবহার করতেন এবং দলীল হিসেবে উপস্থাপন করতেন।

তিনি মাঝারি উচ্চতার, শক্ত গড়নের, কর্মঠ, প্রাণবন্ত এবং স্পষ্টভাষী বিতার্কিক। তিনি উদাহরনসহ তাঁর যুক্তিগুলো তুলে ধরতেন। তিনি যা হক (সত্য) বলে বিশ্বাস করতেন তাঁর সাথে বিন্দু পরিমাণ দেন-দরবার করতেন না। তাঁর দাড়ি মাঝারি লম্বা ছিল যাতে আধাপাকা চুল ছিল।

জুহাইর কাহালা (ইসলামি সাইন্স কলেজের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত) কলেজের একজন চাকুরীজীবী ছিলেন যখন শাইখ একই কলেজে চাকরি করেন। শাইখ তাকি সম্পর্কে তিনি বলেন, “শাইখ একজন বুদ্ধিমান, ভদ্র, পরিষ্কার হৃদয়ের মানুষ ছিলেন। তাঁর ব্যাক্তিত্ব ছিল আন্তরিক, মহৎ, প্রভাবসম্পন্ন। মুসলিম উম্মাহর প্রাণকেন্দ্রে ইহুদি-বসতি’র উপস্থিতি তাঁকে প্রচন্ডভাবে ব্যাথিত করে এবং তাঁকে উদগ্রীব করে তোলে”।

শাইখ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানি (রাহিমাহুল্লাহ) ও হিযবুত তাহরিরঃ

৪র্থ হিজরির পর যে সকল দল বা আন্দোলনের আবির্ভাব হয়েছিল সেগুলোকে শাইখ তাকি উদ্দিন আন নাবাহানি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করছিলেন, এর পিছনে কঠোর পরিশ্রম দিয়েছিলেন। তিনি তাদের কায়দা-কৌশল, চিন্তা-মতবাদ, সমাজে বিস্তার লাভ ও তাদের ব্যার্থতা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তিনি যেহেতু চিন্তা করেছিলেন খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য একটা রাজনৈতিক দল থাকা আত্যাবশ্যকীয়, তিনি এই দৃষ্টিকোণ থেকেই দল গুলোকে নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। মোস্তফা কামাল “আতা-তুর্ক” এর হাতে যখন খিলাফাহ ধ্বংস হওয়ার পর বহু ইসলামী আন্দোলন থাকার পরও মুসলিমরা খিলাফাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে ব্যার্থ হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভু-খন্ড ইসরাইলিদের দ্বারা দখল হওয়া এবং ব্রিটিশ সরকারের মদদপুষ্ট জর্ডান, ইরাক ও ইজিপ্ট সরকারের সহায়তায় ইহুদি শক্তির সামনে সমগ্র আরবের নিঃসহায় অবস্থা তাঁর উচ্ছ্বাসকে প্রভাবিত করে। তাই তিনি মুসলিমদের পুনঃর্জাগরণের উৎসগুলো খুঁজে বের করা শুরু করেন এবং প্রথমেই তিনি উম্মাহ’র পুনর্জাগরণ এর ব্যাপারটি অবলম্বন করেন ।

১৯৫০ সালের ১লা জানুয়ারী শাইখ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানির প্রথম বই ‘’আনকাজ ফালাস্তিন’’। এবং একই বছরের আগস্টে তার দ্বিতীয় বই ‘’রিসালাতুল আরব’’ প্রকাশ হয়। বইদুটো শুধুমাত্র চিন্তা, ‘আকীদা, উম্মাহ’র আসল বক্তব্য বা ইসলামের মূল বানী, এবং বইগুলোতে বলা হয় – ইসলামি একমাত্র ভিত্তি যার উপর আরবগণ ভর করে পুনরুজ্জীবিত হবে। আরব জাতীয়তাবাদীদের বানী হতে শেখ এর বানী ভিন্ন ছিল। আরব জাতীয়তাবাদীদের প্রচারিত বক্তব্য উম্মাহের সাথে তথা ইসলামের মূল বক্তব্য থেকে শুধু দূরত্বই বাড়িয়ে দিয়েছে, বরং উম্মাহকে পাশ্চাত্য চিন্তা-চেতনা দিয়ে ব্যস্ত রেখেছে যা ইসলামী ‘আকীদা হতে ভিন্ন। অতঃপর তিনি আরব-জাতীয়তাবাদের চিন্তা-মতবাদ নিয়ে পড়ালেখা করেন এবং তাঁর কাছে যেসকল প্রস্তাব আসত তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করত কিন্তু সেগুলো কখনও তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

তিনি কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তিনি যেসকল আলেমদের সাথে পরিচয় আছে বা দেখা হয়েছে তাদের সকলের সাথে যোগাযোগ করেছেন। মুসলিম উম্মাহকে পুনরজ্জীবিত করতে এবং উম্মাহ’র পূর্বের গৌরব ফিরিয়ে নিতে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার মতামত তাঁদের সকলের কাছে তুলে ধরেন। এজন্য তিনি সমগ্র ফিলিস্তিন ঘুরে বেড়িয়েছেন খ্যাতিমান আলেমদের এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তাঁর চিন্তা-মত প্রকাশ করতে। এ উদ্দেশ্যে তিনি অনেক সেমিনার আয়োজন করতেন, আলেমদের সম্মেলন করতেন। এ সেমিনারগুলোতে তিনি উম্মাহর পুনর্জাগরণের সঠিক পদ্ধতি নিয়ে আলেমদের সাথে আলোচনা (বা বিতর্ক) করতেন এবং বলতেন যে তাঁরা ভুল পথে হাঁটছেন আর তাঁদের সকল কষ্ট বৃথা যাবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাদের সাথে বিতর্ক করতেন তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক, জাতীয়তাবাদি বা ইসলামি দলের কর্মকর্তাদের সাথে। তিনি আল আকসা মসজিদ, আল খলীল মসজিদ সহ বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক ঘটনাবলী ও বিভিন্ন দিবসে আলোচনা করতেন। তিনি প্রায়ই “আরব লীগ” এর বাস্তবতা দেখিয়ে উল্লেখ করতেন যে এটি একটি পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের ফল এবং অনেক পাশ্চাত্য হাতিয়ারের অন্যতম যা দ্বারা মুসলিম ভুখন্ডে তাঁদের আধিপত্য বজায় রাখে। শাইখ পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করতেন এবং মুসলিম ও ইসলাম বিরোধি নীল-নকশা উম্মাহ’র সামনে তুলে ধরতেন। তিনি মুসলিমদের দায়িত্ববোধ জাগিয়ে দিতেন এবং তাঁদের আহবান জানাতেন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যার ভিত্তি হবে একমাত্র ইসলাম।

শাইখ তাকিউদ্দিন “প্রতিনিধিগণের সভা”র (যা শুধুমাত্র উপদেষ্টামণ্ডলীর কমিটিই ছিল) নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর ধ্যান-ধারনা বা মতামত, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, ইসলামী দল গঠনের ব্যাপারে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও ইসলামকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা ইত্যাদি কারণে সরকার তাঁর প্রতিকূলে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে।

কিন্তু এসবের সত্ত্বেও না তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরে যান, না তিনি দমে গেছেন, বরং তিনি আলোচনা বা বিতর্ক চালিয়ে গেছেন। একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য প্রখ্যাত আলেম, বিচারক, রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের প্রভাবিত করার মাধ্যমে তিনি অচিরেই সাফল্যের মুখ দেখেন। অতঃপর তিনি এসব সমাজের উচুমাপের লোকদের কাছে একটি কাঠামো ও দল-এর মতবাদ উপস্থাপন করতেন। কিছু আলেম ও কিছু চিন্তাবিদ তাঁর মতবাদের সাথে একমত পোশন করেন এবং তাঁদের সম্মতি প্রকাশ করেন, এভাবে দল প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর রাজনৈতিক তৎপরতা একেবারে শীর্ষে পৌছে।

আল-কুদস, রহমতময় নগরিতেই তার দল এর প্রতিষ্ঠার ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন হয়েছিল, যেখানে শাইখ সুপ্রীম কোর্টে কর্মরত ছিলেন। সেসময়, তিনি বিভিন্ন আলেমদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন শুরু করেন যেমন: কালকিলা শহরের শেখ আহমাদ দা’ওর, ইজিপ্ট এর সায়্যাদান নিমর, রামাল্লাহ শহরের দাউদ হামদান, নাবলুসের আদিল, ঘানিম আব্দু, মুনির শাকির, শেখ আ’সাদ বেওয়িয প্রমুখ।

শুরুতে, প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে শুধু প্রয়োজনুসারে মিটিংগুলো সংঘঠিত হত। বেশিরভাগক্ষেত্রে আল-কুদস এবং আল-খলীল শহরে মিটিংগুলো আয়োজিত হত যার বিষয়বস্তু ছিল মানুষদের দলের চিন্তার দিকে আহবান জানানো। বিতর্কের মধ্যে মুসলিম উম্মাহ’র গৌরব-উজ্জ্বল ফিরিয়ে আনতে ইসলামি প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকে যতক্ষণ না এ মানুষগুলো একটা রাজনৈতিক দল গঠন করতে শপথ করে।

১৭ই নভেম্বর ১৯৫২ সালে, দল এর ৫ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য জর্ডানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে বিধিমতাবেক “নো অবজেকসান সার্টিফিকেট” এর জন্য আবেদন জানান। এই ৫ জন সদস্য হলেন: ১) শাইখ তাকি উদ্দিন আন-নাবহানি - নেতা, ২) দাউদ হামদান – উপনেতা ও সচিব, ৩) ঘানিম আব্দুহ – অর্থ সম্পাদক, ৪) আদিল আল নাবলুসি – সদস্য ও ৫) মুনির শাকির – সদস্য। পরবর্তীতে একটি দল গঠনের জন্য তারা অটোমান আইন এর সকল আচরনবিধি সম্পন্ন করেন। দলের এর প্রধান কার্যালয় আল-কুদস এ রাখা হয় এবং যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করে সব অটোমান আইন অনুযায়ী বৈধতা পায়।

দলের “মৌলিক গঠনতন্ত্র ও তা প্রয়োগের শর্ত” এর দৈনিক আল-সারিহ পত্রিকার ইস্যু ১৭৬ (তারিখ: ১৪ই মার্চ ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে জুমাদ আল আউওাল ১৩৭২ হিজরি) এর প্রকাশনায় একে একটি বৈধ দল হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এর মাধ্যমে তৎকালীন অটোমান আইনে দল তাঁর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অধিকার পায়।
কিন্তু, সরকার ৫ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় এবং তাঁদের ৪ জন কে গ্রেপ্তারের পর জেরা শুরু করে। ২৩শে মার্চ ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই রজব ১৩৭২ হিজরি সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে ঘোষণা করে যে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল এবং এর সদস্যদেরকে সমস্ত কর্মকান্ড বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হল। ১লা এপ্রিলে আল-কুদস এর কার্জ্যালয়ের সকল পোস্টার ও ব্যানার তুলে নেওয়া হয় – সরকারের নির্দেশ অনুসারে।

যাইহোক, শাইখ তাকি এ “নিষিদ্ধ” কে কোন গুরুত্ব দেয়নি বরং তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে যান। তিনি এর প্রচারনার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন যার জন্য এর জন্ম।

ইসলামী জীবন-ব্যাবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য আল-আকসা মসজিদের জামাত আদায় করার স্থানে এ দল মানুষদের পাঠচক্রের আয়োজন শুরু করে। তাঁদের মনোমুগ্ধকর কার্যক্রমের জন্য সরকার সস্তা চাল খেলতে শুরু করে যেন দলটি কখনো শক্তিশালী সংগঠনে রুপ না নেয়। ১৯৫৩ সালের শেষ দিকে, শাইখ তাকি এহেন পরিস্থিতিতে তাঁর স্থান পরিবর্তন করেন।

১৯৫৩ সালের নভেম্বর মাসে শেখ তাকি সিরিয়াতে পাড়ি জমান, সেখানে সিরিয়ান সরকার দ্বারা গ্রেপ্তার হন এবং তাঁকে লেবাননে পাঠিয়ে দেন কিন্তু লেবানন সরকারও তাঁকে দেশে ঢুকতে বাঁধা দেয়। আল-হারিরের থানার অফিসার ইন চার্জ কে তিনি অনুরোধ করেন তাঁর বন্ধুকে একটি ফোন-কল করার জন্য। অফিসার তাঁকে কল করতে দেয়। তিনি তাঁর বন্ধু মুফতি শেখ হাসসান আল ‘আলা কে ফোন-কল করেন এবং ঘটনা বর্ণনা করেন। শেখ আল ‘আলা সাথে সাথে পদক্ষেপ গ্রহন করেন এবং অফিসার কে ধমক দেন এই বলে যে যদি তিনি শাইখ তাকি কে লেবাননে ঢুকতে না দেন তাহলে তিনি প্রচারনা শুরু করবেন যে লেবাননের তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার একজন অন্যদেশের বহিষ্কৃত আলেমকে দেশে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। লেবানন কর্তৃপক্ষ এটাকে হুমকি হিসেবে নেয় এবং শাইখ তাকিকে লেবাননে প্রবেশ করতে দেন।

শাইখ তাকি লেবাননে আসার পর তাঁর চিন্তা-মতবাদ প্রচারণায় নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তেমন কোন বাঁধার সম্মুখিন হননি। যখন লেবানন সরকার তাঁর চিন্তা-ধারা’র আসন্ন বিপদকে আঁচ করতে পারলো, তখন শাইখ এর প্রতি কড়াকড়ি আরোপ শুরু করলো। তাই শাইখ বেইরুত থেকে ত্রিপোলিতে চলে যান। শাইখের কাছের বন্ধুদের কাছ থেকে জানা যায়, তিনি তখন তাঁর সময়ের বেশির ভাগ সময় পড়ালেখায় ব্যয় করতেন। তিনি রেডিও’র মাধ্যমে বিশ্বের খবর নিতেন এবং চমৎকার রাজনৈতিক পর্যালোচনা তৈরি করতেন। তিনি তাঁর নাম “তাকি” অর্থাৎ “ধার্মিক” এর মতই ধার্মিক ছিলেন। তিনি সর্বদা নিজের জিহবা সংযত রাখতেন, চোখ নামিয়ে রাখতেন। তাঁকে কখনও কোন মুসলিমকে অমার্জিত কথা বলতে শোনা যায়নি, কাউকে অপমানিতও করেননি, এমনকি যেসব দা’ইয়ি তাঁর সাথে ইজতিহাদের ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করতেন।

ইরাকে তিনি “নুসরাহ”র (সাহায্য’র)প্রতি বেশী নজর দেন মুসলিমদের পুনর্জাগরণের পথে এগিয়ে যাওয়ার পথ কে আরো সুগম করতে। এজন্য তিনি নিজে বেশ কয়েকবার ইরাকে যান কারণ সেখানে আব্দুল সালাম আরিফ এর মত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্ব ছিল।ইরাকে তাঁর অনেকগুলো যাত্রার শেষটিতে তিনি গ্রেপ্তার হোন এবং প্রচন্ডভাবে প্রহৃত হোন, শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাত করা হয়। কিন্তু শাইখের জেরাকারী তাঁর কাছ থেকে কোন তথ্য বের করতে ব্যর্থ হয়। তিনি শুধু এ কথাই বারবার ব্যক্ত করতে থাকেন যে, “একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি চিকিৎসার খোঁজে”। আসলে তিনি ইরাকে গিয়েছিলেন পিছিয়ে পড়া উম্মাহকে পুনর্জাগরণ করতে। ইরাকি কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছ থেকে কোন তথ্য না পেয়ে তাঁকে প্রচন্ডভাবে প্রহার করে ও তাঁর হাত ভেঙ্গে দেয় এবং তাঁকে দেশ থেকে বের করে দেয়, তখন তাঁর সমস্ত শরীর প্রহারের কারণে রক্তে রঞ্জিত ছিল। তিনি যখনই ইরাকের সীমানা অতিক্রম করলেন, জর্ডানের গোয়েন্দা সংস্থা ইরাকের গোয়েন্দা সংস্থাকে অভিত করলেন যে তিনিই ছিলেন শাইখ তাকি উদ্দিন যাকে ইরাকি গোয়েন্দা সংস্থা হন্য হয়ে খুজছিলো। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, সময়টা তাঁদের পক্ষে ছিল না, বরং শাইখ ততক্ষণে অনেক দূর পাড়ি দিয়েছেন।


উম্মাহ এ শাইখকে শেষ বিদায় জানায় শনিবার, ফজরের ওয়াক্তে, ১লা মহররম ১৩৯৮, ১১ই ডিসেম্বর ১৯৭৭ সালে যখন তার বয়স হয়েছিল ৬৮। বস্তুত, তিনি ছিলেন এক মহান নেতা, জ্ঞানের সমুদ্র, সমসাময়িক কালের অন্যতম বিচারক, ইসলামি চিন্তার পুনর্জাগরক, বিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ, সত্যিকারের মুজতাহিদ এবং দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী আলেম। বেইরুতের আল-অযায়ি কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। শাইখ তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ও আত্মত্যাগের ফলাফল নিজ জীবনে ভোগ করতে পারেননি। তিনি খিলাফত রাষ্ট্র দেখে যেতে পারেননি যার জন্য দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।কিন্তু রেখে গেছেন মুসলিম উম্মাহ কে একত্রিত করার সঠিক মতবাদ। যেই মতবাদ আজ সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে এবং তাঁর সেই মতবাদ সমগ্র বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে ।

আল্লাহ শাইখ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানি (রাহিমাহুল্লাহর) সেই প্রচেষ্টাকে কবুল করুন, দুনিয়াতে এর পূর্ণ সফলতা দান করুন, তার উপর রহম করুন ও তাকে সর্বোচ্চ জান্নাত
দান করুন। আমীন।

শাইখের লেখা বইয়ের একটি লিস্ট নিচে দেওয়া হল:

নিযামুল ইসলাম, আত-তাকাত্তুল আল-হিজবী, মাফাহীম,ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, ইসলামী সামাজিক ব্যবস্থা, ইসলামী শাসন ব্যবস্থা, ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধান, সংবিধানের সূচনা (সারসংক্ষেপ), ইসলামী ব্যাক্তিত্ব, রাজনৈতিক চিন্তা, উষ্ণ আহবান, আল-খিলাফাহ, চিন্তা, মনের উপস্থিতি (প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব), সমাজে কর্তৃত্ব স্থাপন, যাত্রা শুরুর স্থান, লিস্লাহ-এ-মিসর, আল ইত্তিফাকিয়াত আস সানিয়া আল মাস্তিয়া আল সুরইয়া ওয়াল ইয়ামনিয়া, হাল কাদিহ ফালাস্তিন ‘আলা তারীকাতিল আমরিকিয়া ওয়াল ইংলিজিয়া, নাজরিয়া আল ফারাঘ আল সিয়াসি হাল মাসরো’ ইজান হাওয়ার .

এছাড়াও তাঁর লেখা শত শত বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুস্তিকা আছে।

যখন তাঁর বইগুলো নিষিদ্ধ তখন তিনি তার দলের অন্যান্য সদস্যের নামে যেসব বই প্রকাশ করেন তা হল:

অর্থনৈতিক নীতি, মারক্সিস্ট কমিউনিসম এর জবাব, খিলাফাহ যেভাবে ধংস হল, ইসলামে সাক্ষ্য-প্রমানাদির (বিচারসংক্রান্ত) নিয়মকানুন, ইসলামে শাস্তি ব্যবস্থা, নামাজের নিয়মসমুহ, ইসলামী চিন্তা .

এবং দল প্রতিষ্ঠার আগে তিনি দু’টো বই লিখেছিলেন:

রিসালাতুল আরব, আনকাজ ফালাস্তিন







ঘটনা দুইটির শিক্ষণীয় অনেক দিক আছে













যুগে যুগে ইসলাম বাস্তবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এসেছে। আপনি কি প্রস্তুত বাস্তবতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং পদদলিত করতে?
Written By Brother Maksud
.
পূর্বেকার দুইটি ছোট কিন্তু অর্থপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করব-
.
প্রথম ঘটনা-মারিয়াম আঃ যখন ঈসা আঃ কে নিয়ে গর্ভাবস্থায় লোকালয় থেকে বেরিয়ে গেলেন এবং এক পর্যায়ে ক্ষুধার্ত,ক্লান্ত,অসহায় অবস্থায় একটি খেজুর গাছের নিচে আশ্রয় নিলেন।তিনি তার ক্ষুধার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলে আল্লাহ ফেরেশ্তা কর্তৃক তার কাছে নির্দেশ পাঠালেন যেন তিনি যেই খেজুর গাছের নিচে অবস্থান করছেন তা হাত দিয়ে নাড়া দেন,এতে করে খেজুর গাছ থেকে যে খেজুর পরবে তা দিয়ে তিনি ক্ষুধা নিবাড়ন করতে পারবেন।
.
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে মারিয়াম আঃ তখন প্রচন্ড প্রসব বেদনায়(প্রসব বেদনা কি রকম হয় তা নিয়ে কিছু পড়াশোনা করে নিতে পারেন) কাতর তারউপর উনি দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে এসেছেন, ওনার গায়ে তিল পরিমান শক্তি অবশিষ্ট নাই এমন অবস্থায় খেজুর গাছের মত, শক্ত একটি গাছ একজন মহিলা নাড়া দিবে আর তা থেকে খেজুর পরলে তিনি তা খাবেন ,এটা আমাদের বাস্তবতার নিরিখে দেখলে খাজুরে আলাপ ছাড়া আর কিছুই মনে হবেনা!!এবং এটা নিতান্তই অবাস্তব একটি ব্যাপার, বাস্তবতার আলোকে এখানে খেজুর গাছ নাড়া দেয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।কিন্তু মারিয়াম আঃ আল্লাহর হুকুম পালন করলেন এবং আল্লাহর সাহায্যে খেজুর গাছ থেকে খেজুর পরল এবং তিনি তা খেয়ে শক্তি অর্জন করলেন।
.
এখন এখানে প্রশ্ন? আল্লাহ যদি সাহায্য ই করবেন তবে আবার কেন তিনি বললেন গাছ ধাক্কা দিতে!!!!
.
দ্বিতীয় ঘটনা-
.
যখন ফেরাউনের বাহিনী মুসা আঃ এর কউম কে তাড়া করছিল এবং মুসা এবং তার কউম ফোরাতের তীরে এসে আটকে গেলো এবং মুসা আঃ আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন,তখন আল্লাহ মুসাকে বললেন তোমার লাঠি দ্বারা ফোরাতের গায়ে আঘাত করো।মুসা আঃ আঘাত করলেন এবং ফোরাতের মাঝ দিয়ে রাস্তা তৈরি হয়ে গেল যা দিয়ে মুসা আঃ ও তার কউম নদী পাড় হলেন......এমতাবস্থায় যখন ফেরাউন ও একি রাস্তা দিয়ে তাদের দিকে তেড়ে আসছিল,তখন মুসা আঃ আবার তার লাঠি দিয়ে ফোরাতের গায়ে এলপাতাড়ি আঘাত করতে লাগলেন যাতে ফোরাত তার পুরবাবস্থায় ফিরে যায়,কিন্তু এবার আর কাজ হচ্ছে না বরং আস্তে আস্তে ফেরাউন বাহিনী মুসা আঃ ও তার কউম কে ধ্বংস করতে এগিয়ে আসছে। তখন আল্লাহ (সু)মুসাকে উদ্দেশ্য করে বললেন হে মুসা তোমার কি মনে হয় ওই লাঠির আঘাতে ফোরাত খণ্ডিত হয়ে রাস্তা তৈরি হয়েছে?না এটাতো ছিল আমার হুকুম!!!!!
.
আবার প্রশ্ন মুসা আঃ কে আল্লাহ যে কাজ করতে বলেছিলেন তা কি বাস্তবতার আলোকে একটি পাগলের প্রলাপ নয়?এইরকম কেউ যদি প্রস্তাব করে যে তুমি লাঠি দিয়ে বাড়ি মারলেই নদীর মাঝে রাস্তা হয়ে যাবে তা বিশ্বাস করা এবং সেই অনু্যায়ি কাজ করা কি বোকামি বলেই পরিগনিত হবেনা!!!!!কিন্তু মুসা আঃ হুকুম অনু্যায়ি অবিচল রইলেন এবং আল্লাহ ফোরাত এর মাঝে রাস্তা তৈরি করে দিলেন......কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় আল্লাহ এ পাশে এসে বলছেন লাঠীর আঘাতে নাকি কিছুই হয়নি!!!!তাহলে আল্লাহ কেন শুধু শুধু আঘাত করতে বললেন!!!!
.
এই ঘটনা দুইটির শিক্ষণীয় অনেক দিক আছে আমি কয়েকটি দিক বলব!!
.
আমাদের দ্বীনের ভিক্তি হচ্ছে আল্লাহর উপর ইমান!! দ্বীন আমাদেরকে শারিয়াহ দ্বারা দিক নির্দেশনা দেয় এবং আমাদের কাজের ফলাফলের ব্যাপারে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল এর নির্দেশ দেয়।
.
আজকে অনেকেই বাস্তবতার আলোকে তাদের কর্মকাণ্ডের দিকনির্দেশনা গ্রহন করে থাকেন যখন কিনা আমদের দিকনির্দেশনা নেয়ার কথা শারিয়াহ থেকে!!!!!হ্যা আমরা বাস্তবতা(মানাত) পর্যালোচনা করব যাতে করে আমরা শারিয়াহর দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ভুল জায়গায় ভুল হুকম না বাস্তবায়ন করি!!!!
.
আজকে আমাদেরকে অনেকেই বলে এখন এই যুগে বাংলাদেশ এ খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়!!!সেনাবাহিনী কখনোই আপনাদের নুস্রাহ দিবে না!!!!তখন আমরা তাদের বলি,আপনার বাস্তবতার ব্যাপারে এই হতাশাব্যাঞ্জক বিশ্লেষণই আমাদের জন্য অনুপ্রেরনা এবং আমরা আশান্বিত এই জন্য যে আল্লাহর সুন্নাহ ই হচ্ছে বাস্তবতার বিপরীত কিছু করে দেখানো, না হয় এটা আল্লাহর শান বা ভাব বা অহংকারের সাথে ঠিক খাপ খায় না!!!!!
.
আসলেই মুমিনদেরর বিষয়টা আশ্চর্যজনক। আপনারা আমাদেরকে অনুপ্রানিত করলেও আমরা অনুপ্রানিত হই আবার তিরস্কার বা হতাশাব্যাঞ্জক কিছু বললেও হই!!!
.
উপরের ঘটনা দুটোর আরেকটি দিক হচ্ছে আমরা বিশ্বাস করিনা আমাদের কাজের কারনে কিছু হয়!!আমরা যদি মনে করি যে মারিয়াম আঃ এর গাছে ধাক্কা দেয়ার কারনেই খেজুর পড়েছে বা বা মুসা আঃ এর ফোরাতে লাঠি দিয়ে বাড়ি মাড়ার কারনেই ফোরাতে রাস্তা হয়েছে তবে আমরা সঠিক ভাবে আল্লাহর উপর ঈমাণ আণলাম না! আমরা খিলাফাকে আমদের কাজের রেসাল্ট হিসেবে পাব বলে আমাদের কাজ করিনা,বরং আমরা আমাদের কাজ করি আল্লাহর হুকুম হিসেবে,শারিয়াহ অনুযায়ী যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের উপর খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার কাজ ফরজ করে দিয়েছেন......আমরা একি সময়ে তীব্র বেগে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে খিলাফাহর জন্য কাজ করে যাই এবং একিসময়ে বিশ্বাস করি খিলাফাহ হবে দুনিয়াতে আমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ আমাদের কাজের ফসল না,তবে এই অনুগ্রহ পাবার শর্ত হচ্ছে হুকুম অনুযায়ী অবিচল থাকা,তাই আমরা তীব্র আশা করি।যা করার আল্লাহ ই করবেন তবে তিনি তার আগে পরিক্ষা করে নিবেন মারিয়াম আঃ এর মত নারীকে, মুসা আঃ এর মত নবীকে এবং আমাদের মত দুর্বল বান্দাদেরকে যে আমরা কি তার কথায় বিশ্বাস করে হুকুম অনুযায়ি অবিচল থাকি কিনা!!!নাকি কিছু বাস্তববাদীদের কথায় বা কিছু বাস্তবতার স্বীকার হয়ে আল্লাহর হুকুম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেই। আল্লাহ আমাদেরকে হুকুম অনুযায়ি অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন।




OTTOMAN PILOT AHMET ALI EFFENDI
WORLD'S FIRST BLACK PILOT, 1916

Ahmet Ali Effendi (Ahmet Ali Çelikten) was an Ottoman aviator who may have been the first black military pilot in aviation history. Ahmet born in 1883 in İzmir to his mother Zenciye Emine Hanım and father Ali Bey, of African Turkish descent. (His grandmother and grandfather are from Nigeria) He aimed to become a naval sailor and entered the Naval Technical School named Haddehâne Mektebi (literally "School of the Blooming Mill") in 1904. In 1908, he graduated from school as a First Lieutenant (Mülâzım-ı evvel). And then he went to aviation courses in the Naval Flight School (Deniz Tayyare Mektebi) that was formed on 25 June 1914 at Yeşilköy. He was then a member of the Ottoman Air Force.
During World War I, he married Hatice Hanım who was an immigrant from Preveza. He became first black military pilot in aviation history when he started serving in November 1916. On 18 December 1917, Captain (Yüzbaşı) Ahmed Ali was sent to Berlin to complete aviation courses. He died in 1969.
Source: Ottoman History Picture Archives








 
 
 
 
 
 
 
 
·









রবিবার, ৪ মে, ২০১৪

ইমাম মাহদির পুনরাবির্ভাব ও পূর্ব দিক থেকে বিজয়ের গন্ধ




রাসুল (সা) একদিন পূর্ব দিকে তাকেয়ে বড় বড় করে নিশ্বাস নিচ্ছিলেন, এমন অবস্থায় এক সাহাবি জিজ্ঞাস করল, ইয়া রাসুল আল্লাহ্, আপনি এমন করছেন কেন ?
রাসুল (সাঃ) বললেন আমি পূর্ব দিক থেকে বিজয়ের গন্ধ পাচ্ছি। সাহাবি (রাঃ) জিজ্ঞাস করলেন, ইয়া রাসুল আল্লাহ্ কিসের বিজয়ের গন্ধ পাচ্ছেন?
রাসুল (সাঃ) বললেন পূর্ব দিকে মুসলিম মুস্রিক ( যারা মূর্তি পূজা করে ) তাদের মাঝে একটি যুদ্ধ হবে, যুদ্ধ টা হবে অসম , মুসলিম সেনাবাহিনী সংখ্যায় খুব কম থাকবে, এবং মুস্রিকরা থাকবে সংখ্যায় অধিক। মুসলিম রা এত মারা যাবা যে রক্তে মুসলিমদের পায়েয় টাঁকুনি পর্যন্ত ডুবে যাবে।
মুসলিম রা তিন ভাগে বিভক্ত থাকবে, এক সারি এত বড় মুস্রিক সেনাবাহিনী দেখে ভয় পেয়ে পালাবে
রাসুল (সাঃ) বললেন তারাই হোল জাহান্নামি।
আর এক ভাগ এর সবাই শহীদ হবেন।
শেষ ভাগ যারা থাকবে, তারা আল্লাহ্ আর উপর ভরসা করে যুদ্ধ করে যেতে থাকবে, এবং শেষ পর্যন্ত জয় লাভ করবেন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনএই যুদ্ধ, বদর এর যুদ্ধের সমতুল্য। সুবাহানাল্লাহ। উনি এর বলেছেন, মুসলিম রা যে জেখানেই থাকুক না কেন , সবাই যেন ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন আমার উম্মতের দুটি দলকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্ত স্বাধীন করে দিবেন। একদল হল, যারা হিন্দুস্থান তথা ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আরেক দল হল, যারা শেষ জামানায় হযরত ঈসা ইবনে মারিয়ম () এর সঙ্গী হবে। (নাসায়ী শরীফ খন্ড-,পৃষ্ঠা-১৫২ তাবরানী)
হযরত আবু হুরায়রা আরও বর্ণনা করেন, রাসূল (সা) আমাদেরকে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ওয়াদা নিয়েছিলেন।আমি যদি অভিযান পেয়ে যাই আহলে আমি যেন আমার জান-মাল এতে ব্যয় করি। আর যদি আমি যুদ্ধে নিহত হই তাহলে সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদরুপে পরিগনিত হব। আর যদি জীবিত ফিরে আসি তাহলে আমি জাহান্নাম থেকে মুক্ত আবু হুরায়রা হয়ে যাব। (মাসনাদে আহমাদ,হাদিস-৭১২৮, - পৃষ্ঠা-৫৩৩, সুনানে কুবরা, ইমাম নাসায়ী হাদিস /৪৩৮৩ - পৃষ্ঠা-২৮)
ইতিপূর্বে এবং আজকে ভারতে যত মুসলিম শহীদ হল তাদের রক্তের উপর দিয়ে ভারতের বুকে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাল্লাহ

ইমাম মাহদির পুনরাবির্ভাব খিলাফাহ নিয়ে ইদানিং বেশ আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই আছেন এই সঙ্ক্রান্ত হাদিসগুলো কোন প্রকারের এবং ওসব হাদিস কে কিভাবে বিশ্লেষণ করতে হয় তা নিয়ে অবগত না যেখানে এই বিষয়টি সহ শেষ জামানার আর কিছু ঘটনার বিবরণীমূলক বর্ণনা গুলো "উসুল আল হাদিথ" "উসুল আল ফিকহ" এর চোখ দিয়েই দেখতে হবে। তাই গতকালের আমার একটা কমেন্ট নীচে উল্লেখ করলাম। আমাদের কার কি মনে হয় এসবের ওপর ভিত্তি করে হাদিস ব্যাখ্যা করা উচিৎ না মোটেও। কোন হাদিস কি নির্দেশ দেয় বা আদৌ দেয় কিনা সে বিষয়ে বেসিক পড়াশোনা না করে কমেন্ট করলে আমরা নিজেরাই বিপথে চলে এবং অন্যদের নিয়ে যেতে পারি
প্রথমেই বলে নেয়া ভাল ইমাম মাহদির আগমনের হাদিথগুলো থেকে আমরা কোন "আমর" (নির্দেশ) পাই না। এগুলো হল রাসুলুল্লাহ (সা) এর প্রফেসি সঙ্ক্রান্ত হাদিস যা মানব মনের সীমার বাইরের বিষয় এবং যা তখনি বোঝা যায় যখন চোখের সামনে প্রফেসিগুলো বাস্তবরূপ লাভ করে। কিন্তু এই হাদিসগুলোর ওপর ভিত্তি করে "আমল" নির্ধারণ করা চরম বোকামি কারন এগুলো **ইখবারি** (তথ্য/ সংবাদ) আকারে এসেছে যা থেকে কোন হুকুম বের হয় না। উসুল আল হাদিথ এর প্রসিদ্ধ নীতি - আমরা কুরআন এবং হাদিথ এর নুসুস (টেক্সট) এর অর্থ নেয়ার ক্ষেত্রে শুধু মাত্র "হাকিকি" (বাহ্যিক) অর্থই আগে নিব, এবং "মাজাযি/তামসিল" (রুপক) অর্থ তখনি নিতে পারবো যখন মাজায নেয়ার ক্ষেত্রে কোন "কারিনা" (ইশারা) উল্লেখিত থাকবে - এটি আরবি লুঘা (ভাষা) এবং হাদিস এর বইতে ভালমতো উল্লেখিত আছে। তাই এইরুপ ইখবারি প্রফেসি হাদিস এর ক্ষেত্রে লজিক এবং অনুমানবাক্য (syllogism) বের করা মস্ত বড় ভুল।
সাহাবা আজমাইনরা ওইরূপ হাদিসগুলোর ওপর ভিত্তি করে চুপ চাপ বসে থাকতেন না - প্রফেসির হাদিস প্রফেসির জায়গায়, কিন্তু ফরয হুকুম বাস্তবায়নের জন্য কাজ করা চলবে তার নিজস্ব পথে। সালমান ফারসি (রা) এর সেই বিখ্যাত খন্দক যুদ্ধের ঘটনা চিন্তা করে দেখুন যখন রাসুলুল্লাহ একটি বড় পাথরকে তিন বার বারি দিলেন আর তিনটি স্ফুলিঙ্গ বের হল আর যখন সালমান ফারসি রাসুলুল্লাহকে (সা) জিজ্ঞাস করলেন ওই স্ফুলিঙ্গ নিয়ে, রাসুল বললেনঃ "প্রথম স্ফুলিঙ্গ এর সময় আল্লাহ আমাকে ইয়েমেন (দক্ষিন এর দিক) খুলে দিলেন, দ্বিতীয়টার সময় উত্তর (আল শাম) এবং দক্ষিন (আল মাঘ্রিব) এবং তৃতীয়টার সময় মাসরেক (পূর্ব দিক) আমার জন্য খুলে দিলেন"
এই প্রফেসির হাদিস সোনার পর সাহাবারা চুপচাপ বসে ছিলেন না, এবং এই হাদিসগুলো নিয়ে গবেষণাও করেন নি। তারা হাদিসগুলোকে নিতেন শুধু "খাবার" (সংবাদ) আকারে। কিন্তু ওনারা ইসলামী রাষ্ট্র এক্সপানশন এর ফরয কাজ জিহাদের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আমাদের সমাজে এবং পুরো মুসলিম উম্মায় এই ইমাম মাহদির বিষয়টি একটি নিয়তিবাদ (Fatalism) এর মতো বিষয়ে পরিণত হয়েছে যা হারাম। আমরা ওনার আগমনের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেরা খিলাফত প্রতিষ্ঠার মতো ফরয হুকুমকে তারাক করছি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইমাম মাহদির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার যে হাদিসটি আবু দাউদ শরিফে আছে যা উম সালামা কর্তৃক বর্ণিত তাতে এটা পুরোই স্পষ্ট যে একজন খলিফার মৃত্যুতে যখন ইখতিলাফ শুরু হবে - " ﺪﻨﻋ ﻑﻼﺘﺧﺍ ﻥﻮﻜﻳ ﺔﻔﻴﻠﺧ ﺕﻮﻣ" - তখন পরবর্তী খলিফা নিয়োগের কার্যক্রম এর প্রেক্ষাপটেই ইমাম মাহদি কে খলিফা করে দেয়া হবে। তাই আগে খলিফা আসবে এবং এটাই হাকিকি অর্থ এবং এটাকেই মেনে নিতে হবে; অন্য কোন মাজায/তামসিল অথবা লজিক এখানে খাটানো যাবে না।
তাই মনে রাখা উচিৎ মাহদির আগমন একটা সুসংবাদ এবং ইখবারি হাদিস যা থেকে কোন হুকুম বের হয় না, আর খিলাফতের জন্য কাজ করা হল ফরয। তাই ফরয কে বাদ দিয়ে ইখবারি হাদিস নিয়ে মেতে থাকা শরিয়াহ বহির্ভূত



মাজার পুজারী কারা জানেন?
মাজার পুজারী ওরা যারা কবরে গিয়ে মান্নত করে..

সরকার পুজারী কারা জানেন?
সরকার পুজারী ওরা যারা ভোট দিয়ে কোনো বেক্তি বা দলকে আল্লাহর আইন বেতিত আইন দিয়ে শাসন করার সুযুগ করে দেয়..

মন পুজারী কারা জানেন?
মন পুজারী ওরা যারা নিজের মন মুতাবিক সব কিছু করে কোরান হাদিস না মেনে..